গাজীপুরে অবৈধ মাদবর এগ্রোর দূষণের দাপট, মালিক বেপরোয়া

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুর সদর উপজেলার মেম্বারবাড়ী থেকে পূর্ব দিক দিয়ে বেশ কিছুদূর এগোলে ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের নলজানী। রাস্তার দুপাশে গাছপালা ঘেরা সবুজ প্রকৃতি।

এই প্রকৃতি দিন দিন দূষিত হচ্ছে। এ জন্য মৎস্য ও প্রাণিখাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মাদবর এগ্রোকে দায়ী করেছে খোদ পরিবেশ অধিদপ্তর।

সরেজমিনে জানা যায়, নলজানী রাস্তার পাশে তিন বছর ধরে মাদবর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কার্যক্রম চলছে। কারখানাটির মালিক আওলাদ হোসেন মাদবর। তারা আইন-কানুনের তোয়াক্কা করছেন না।

কারখানা সংলগ্ন দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে বসতবাড়ি। ১০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে রয়েছে নলজানী মোজাদ্দেদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ ছাড়া চারপাশে সংরক্ষিত বনভূমি।

স্থানীয়রা জানান, কারখানাটিতে দিন-রাত উৎপাদন চলে। শব্দ দূষণে তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। পাউডার-জাতীয় ডাস্ট উড়ে ঘরের ভেতরে যাচ্ছে। ঘরের চালার টিনও নষ্ট হচ্ছে।

লোকালয়ে বর্জ্য নির্গমন

একাধিক শিক্ষক জানান, তাদের স্কুলে ১২৬ জন শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুল চলাকালীন সময়ে দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীদের বমিও হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সরেজমিনে তদন্ত করে অভিযোগগুলোর সত্যতা পেয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন করায় অবৈধ কারখানাটিকে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরপরও দূষণ বন্ধে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অব্যাহত থাকে কারখানা সম্প্রসারণের কার্যক্রম। প্রতিবাদকারীদের দেওয়া হয় হুমকি-ধমকি।

এ অবস্থায় গত ১ নভেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া স্বাক্ষরিত পত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র না পাওয়া পর্যন্ত সকল উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু মালিক এক দিনের জন্যও কারখানা বন্ধ করেননি।

ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়, কারখানাটির অবস্থান অগ্রহণযোগ্য এলাকায়। কারখানা কর্তৃক সৃষ্ট উচ্চশব্দ, ডাস্ট ও দুর্গন্ধ দ্বারা বসবাসের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতিসাধন করা হচ্ছে।

এদিকে মালিক কারখানার পূর্ব ও দক্ষিণ দিক দিয়ে বৃহৎ আকারে নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে সম্প্রসারণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র ব্যতীত কারখানা সম্প্রসারণের কোন সুযোগ নেই।

এ ছাড়া নিজেদের সুবিধার জন্য কারখানার পূর্ব পাশের সরকারি খাল ভরাট করা হচ্ছে। দক্ষিণ পাশের ফসলি জমির উর্বরতা হ্রাসের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় মাদবর এগ্রোর এসব বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আইনে মেশিনারিজ জব্দের বিধানও রয়েছে। নয়তো তাদের দাপট চলতেই থাকবে।

এ ব্যাপারে কারখানায় গেলে প্রথমে দায়িত্বশীল কেউ কথা বলেননি। পরে ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম ফোন করেন।

তিনি আলোকিত নিউজকে বলেন, দূষণের কারণে জরিমানার বিষয়টি অনেক আগের কাহিনি। পরিবেশ অধিদপ্তরের বন্ধের নোটিশের জবাব দেওয়া হয়েছে।

আরও খবর