গাজীপুরের কাপিলাতলী ও বিন্দুবাড়ীতে বিদ্যুতের বনভূমি দখলের চমক!

আলোকিত প্রতিবেদক : সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে দুটি পুকুর খনন ও পেঁপে বাগান করা হয়েছে। দিব্যি চলছে আরও দখলের পাঁয়তারা।

বিট অফিসে রয়েছে বিশেষ যোগাযোগ। কেউ কিছু বললে দেওয়া হয় মিথ্যা মামলার হুমকি।

ঢাকা বন বিভাগের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটের কাপিলাতলী ও শ্রীপুর বিটের বিন্দুবাড়ী এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন মনোয়ার হোসেন বিদ্যুৎ।

সরেজমিনে জানা যায়, বিদ্যুতের পৈতৃক বাড়ি বগুড়ায়। তিনি বিন্দুবাড়ী এলাকায় বিয়ে করে ঘরজামাই হিসেবে আছেন। তার শ্যালক বাহারুল ইসলাম ইউরোপ প্রবাসী।

বিদ্যুৎ পেশায় স্থানীয় ইজ্জতপুর বাজারের কসাই। তারা ধীরে ধীরে প্রায় দেড় কোটি টাকার বনভূমি দখল করেছেন।

কাপিলাতলী মৌজা : বাজারের পাশে রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটের কাপিলাতলী মৌজার এসএ ৩৩ নং দাগের প্রায় দেড় বিঘা গজারি বন আগে প্রভাবশালী নিউটন গং ও বাহারুল গংয়ের দখলে ছিল। গত বছর বড় বড় গাছ কেটে বন উজাড় করা হয়।

খবর পেয়ে বিষয়টির ওপর গত ৩১ অক্টোবর একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে আলোকিত নিউজ। পরে স্পটে থাকা ১৭ পিস গাছ উদ্ধার ও পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিট অফিস।

মামলায় নিউটন মিয়া ও তার তিন ভাইকে আসামি করা হলেও বাহারুল পক্ষের বিদ্যুৎকে আসামি করা হয়নি। এরপর নিউটন গং দখল ছেড়ে দিলে বিট অফিসের সাথে যোগসাজশ করে পুরো জমি দখলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন বিদ্যুৎ।

মামলার পরও বনভূমি দখল বহাল

বন বিভাগের নামে থাকা আশপাশের কিছু ধানক্ষেত উদ্ধার করে বনায়ন করা হলেও ওই জমিতে কোন কিছু করেনি বিট অফিস। বিদ্যুৎ গত সপ্তাহে সেখানে ৪০টি আমড়া চারা রোপণ করেছেন।

এ ছাড়া তিনি পাকা রাস্তার সাথে মাসে তিন হাজার টাকায় একটি দোকান ভাড়া দিয়েছেন। দোকানটিতে প্রথমে টিনের চালা ছিল। গত সপ্তাহে পুরনো টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এর আগে নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

বিন্দুবাড়ী মৌজা : ইজ্জতপুর বাজার থেকে নার্সারি মাঠ রোডে শ্রীপুর বিটের বিন্দুবাড়ী এলাকা। বাজার থেকে অল্প দূরে রাস্তার দুই পাশে দুটি পুকুর। দক্ষিণ পাশের এক বিঘা আয়তনের পুরো পুকুর আরএস ১৩৫১ নং দাগের বনভূমিতে খনন করা হয়েছে। আর উত্তর পাশের পুকুরের প্রায় দেড় বিঘার মধ্যে প্রায় এক বিঘা বনের।

এলাকাবাসী জানান, পুকুর দুটির স্থান আগে নিচু ভূমি ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে বিদ্যুতের শ্বশুর মৃত নূরুল ইসলাম মাস্টার উত্তর পাশের জোত জমিতে পুকুর খননের উদ্যোগ নেন। তখন বিদ্যুৎ জোতের সাথে বনের জমিতেও দুটি পুকুর খনন করে ফেলেন।

পুকুর দুটিতে এখন নিয়মিত মাছের চাষ করা হচ্ছে। দিন-দুপুরে এত বড় ঘটনা ঘটলেও বন বিভাগ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

উল্টো বিদ্যুৎকে ‘উপকারভোগী হিসেবে’ দক্ষিণ পাশের পুকুরের পূর্ব পাশে তিন বিঘা আয়তনের একটি উডলট বাগানের প্লট দেওয়া হয়েছে। পুকুরে পানি দেওয়ার জন্য বাগানের ভেতরেই ডিপ মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।

বনভূমি দখল করে পেঁপে বাগান

এ ছাড়া বিদ্যুৎ উত্তর পাশে রাস্তা সংলগ্ন আধা বিঘা বনভূমি দখল করে পেঁপে বাগান করেছেন। সাথে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। পিলার পুঁতে নেট দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে।

কাপিলাতলী মৌজার ওই স্থানের জমির বর্তমান বাজারমূল্য বিঘাপ্রতি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসাবে দখলীয় জমির মূল্য দাঁড়ায় প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা। আর বিন্দুবাড়ী মৌজার তিনটি স্পটে দখলীয় জমির মূল্য বিঘাপ্রতি ৩০ লাখ টাকা হিসাবে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ ও বিট কর্মকর্তাদের বক্তব্য : এ ব্যাপারে মোবাইলে যোগাযোগ করলে অভিযুক্ত বিদ্যুৎ আলোকিত নিউজকে বলেন, তিনি কাপিলাতলী মৌজার বনভূমি দখলের জন্য আমড়া চারা রোপণ করেননি। ছায়ার জন্য কাঠ বাদামের চারা রোপণ করেছেন।

বিন্দুবাড়ী মৌজার পুকুর প্রসঙ্গে বলেন, তার এখানে আসার আগে পুকুর কাটা হয়েছে। কোনটা জোত, কোনটা খাস-তা তিনি জানেন না।

পেঁপে বাগান প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনাকে এত ডাটা দিছে কেডা? আপনার দরকার থাকলে আমার লগে সরাসরি কথা কইয়েন।

জানতে চাইলে রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিট কর্মকর্তা আইয়ুব খান আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি সময় পাই না, আমি যাব। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি, ভেঙেচুরে বাগান করব।

আর শ্রীপুর সদর বিট কর্মকর্তা মীর বজলুর রহমান আলোকিত নিউজকে বলেন, এসব দখল আগে হয়েছে। নতুন করে কিছু করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, বিদ্যুৎ গংয়ের দখল থেকে দ্রুত বনভূমি উদ্ধার করে বনায়ন করা উচিত। এ ছাড়া পুকুর দুটি বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে ইজারা দিলে সরকার রাজস্ব পাবে। নয়তো বন ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি চলতেই থাকবে।

আরও খবর