গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে গ্রীন কোল্ড স্টোরেজের বনভূমি দখলের তাণ্ডব
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিটের মর্দপাড়ায় তাণ্ডব চালাচ্ছে গ্রীন কোল্ড স্টোরেজ।
গত কয়েক বছর ধরে বন ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ফলে মালিক খন্দকার শাহজাহান এখনো বেপরোয়া। তিনি আইন-কানুনের তোয়াক্কা করছেন না।
সরেজমিনে জানা যায়, ডগরী রোডের দক্ষিণ পাশে গজারিয়াপাড়ার মর্দপাড়া এলাকায় বেশ কয়েক বছর আগে বিভিন্ন পণ্য রাখার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান গ্রীন গোল্ড কোল্ড স্টোরেজ ও এগ্রো প্রোডাক্টস কারখানা গড়ে ওঠে। মালিক শুরু থেকেই সংরক্ষিত বনভূমির ওপর দিয়ে মালামাল পরিবহনের জন্য প্রায় ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তা তৈরি করেন।
পরে ধীরে ধীরে গজারি গাছ কেটে রাস্তা প্রশস্ত করা হয়। ২০১৮ সালে কারখানার দক্ষিণ-পূর্ব পাশে বেশ কিছু গাছ কেটে মোথা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
উজাড়কৃত কয়েক শতাংশ বনভূমিতে কারখানার লোকজন শাকসবজির চাষ করছেন। উত্তর-পূর্ব পাশে দূষিত পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মারা যাচ্ছে গাছ।
ঘটনাটি নিয়ে ২০১৮ সালের ৯ মে আলোকিত নিউজে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখনকার বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম ও সাবেক ডিএফও জহির উদ্দিন আকন রহস্যজনক কারণে নীরবতা পালন করেন।
এরই মধ্যে মালিক বড় একটি গোডাউন নির্মাণ করে প্রাণ কোম্পানিকে ভাড়া দেন। গোডাউনটির পশ্চিম অংশে স্থাপনার ভেতরে কয়েক শতাংশ বনভূমি দখল করা হয়।
এভাবে বন বিভাগের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ওই কর্মকর্তারা নির্মাণ কাজের অনুমতি দেন। তাতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ।
এরপর থেকে দিন-রাত চলছে মালবাহী কাভার্ড ভ্যান। ফলে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যভুক্ত এই স্থানের পরিবেশ এখন হুমকির মুখে।
এদিকে বিট কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম ২০১৯ সালে ভবানীপুর বিট অফিসে বদলি হন। পরে বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবিরের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের দিন ২২ জানুয়ারি সকালে উচ্ছেদ অভিযান চালান।
অভিযানে গোডাউনের দখলীয় অংশের অ্যাঙ্গেলসহ ছাউনি বহাল রেখে শুধু পাকা স্থাপনা ও বাউন্ডারি ওয়ালের কিছু কিছু অংশ ভাঙা হয়। পোঁতা হয় সীমানা খুঁটি।
তখন আরিফুল ইসলাম আলোকিত নিউজকে বলেছিলেন, গ্রীন কোল্ড স্টোরেজের ভেতরে ১১ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। অভিযানে প্রায় তিন শতাংশ উদ্ধার করা হয়েছে।
এরপর অবশিষ্ট আট শতাংশ বনভূমি উদ্ধারে আর কোন অভিযান হয়নি। উল্টো কিছুদিন পর উদ্ধারকৃত বনভূমি পুনরায় দখল করে প্রথমে টিনের বেড়া ও পরে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।
ঘটনাটি আজাদুল কবিরকে জানালে তিনি দেখবেন বলে সময় নেন। কিন্তু আগের বিট কর্মকর্তার মত তারও বাণিজ্যে আসক্তি থাকায় শেষে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অপরদিকে চলতি বছরের আগস্টে অবৈধ রাস্তাটিতে রাতের বেলা ইটের খোয়া ও বালু ফেলা হয়। খবর পেয়ে বর্তমান বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন গিয়ে রাস্তার কিছু অংশ কেটে দেন।
পরে কারখানার লোকজন কেটে দেওয়া অংশ ভরাট করে আবার গাড়ি চলাচল অব্যাহত রাখেন। রাস্তাটির কারণে আরও প্রায় আধা বিঘা বনভূমি বেহাত হয়েছে।
এর আগে আজাদুল কবিরের আমলে ২০১৯ সালের ১ মার্চ রাস্তায় পিলার পুঁতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২০০ চারা রোপণ করা হয়। পরে কারখানার লোকজন ওই দিন রাতেই ১০০ ও বাকি চারাগুলো বিভিন্ন সময়ে তুলে ফেলেন।
এ ঘটনায় একটি মামলা হলে আজাদুল কবিরের সাথে মালিকের সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর উদ্ধারকৃত বনভূমিতে স্থাপনা নির্মাণসহ সব সহজ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির মালিক খন্দকার শাহজাহানের সাথে মোবাইলে একাধিকবার কথা হলে তিনি প্রতিবারই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
জানতে চাইলে বাউপাড়া বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন আলোকিত নিউজকে বলেন, সেখানে যা করা হয়েছে, তা তার আগে হয়েছে। রাস্তায় নতুন করে খোয়া ও বালু ফেলার ঘটনায় তিনি মামলা দিয়েছেন।
বিট কর্মকর্তা আরও বলেন, রাস্তাটির শুরুর অংশ বিকেবাড়ি বিটে পড়েছে। তারা ব্যবস্থা না নিলে তার একার পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে গাছ কেটে বন গিলছে গ্রীন কোল্ড স্টোরেজ!