গাজীপুরের ভবানীপুর বিটে ৮ কোটি টাকার বনভূমি দখল!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুর সদর উপজেলার মাহনা ভবানীপুর মৌজার এসএ ৬৭৫ নং দাগের জমি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত।

ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিট এলাকার এই স্থানটি বাঘের বাজারের অদূরে শিরিরচালায় অবস্থিত।

সেখানকার মূল্যবান ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্রমান্বয়ে দখল করে নিচ্ছে।

বিট অফিস বাগান সৃজন না করে দীর্ঘকাল পতিত ফেলে রাখায় দখলদারদের বেশ সুযোগ তৈরি হয়েছে।

এক মন্ডল গ্রুপই ৪৫ শতাংশ বনভূমিতে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে ক্ষমতার ষোল আনা দাপট দেখিয়েছে।

ঘটনাটি নিয়ে শুরু থেকেই আলোকিত নিউজ ডটকমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কয়েকটি পিওআর মামলা দিয়েই দায় সারে।

এবার মর্ডান ফিড মিলের পশ্চিম পাশে আরও কয়েক বিঘা বনভূমি দখলের তৎপরতা চালাচ্ছে একটি চক্র।

ইতিমধ্যে প্রায় দুই বিঘা বনভূমিতে পাকা বাড়ি, কিন্ডার গার্টেন ও মার্কেট নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।

ঘটনাস্থলটি বিট অফিসে যাওয়া-আসার প্রধান রাস্তা সংলগ্ন। কয়েক মাস ধরে শ্রমিক দিয়ে প্রকাশ্যে কাজ করানো হচ্ছে।

ওই এলাকায় বিঘাপ্রতি জমির বর্তমান বাজারমূল্য চার কোটি টাকা। সে হিসাবে দখলীয় জমির মূল্য দাঁড়ায় প্রায় আট কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম বাউপাড়া থেকে ভবানীপুর বিট অফিসে যোগদানের পর বিভিন্ন স্থানে দখল জমে ওঠে। স্থানীয় রফিকুল ইসলাম মাস্টারকেও পথ দেখান তিনি।

পরে তারা গত বছর গাজীপুর আদালত থেকে চার একর ৮০ শতাংশ জমিতে ১৪৪ ধারায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আদেশ এনে উল্টো নিজেরাই তা ভঙ্গ করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

রফিকুল মাস্টারের মার্কেট নির্মাণ

স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে রফিকুল মাস্টারের পাঁচটি দোকান ও পাঁচ রুমের বাড়ি, তাজউদ্দিন মন্ডলের পাঁচটি দোকান ও একটি গোডাউন, তার মেয়ের জামাই মোমেনের দুটি দোকান, কাজলের পাঁচ রুমের বাড়ি এবং কাউসার মোল্লার স্কুলের নয়টি রুম।

বাধা দিলে বা উচ্ছেদ করলে আদালত অবমাননার মামলা হবে-এমন যুক্তি দেখিয়ে বিট অফিস আলোকিত নিউজের চোখেও ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করে।

একাধিক বন কর্মকর্তা আলোকিত নিউজকে বলেছেন, ১৪৪ ধারা মানে জমিতে কোন পক্ষই যেতে পারবে না। বিট অফিসের যোগসাজশ ছাড়া এভাবে স্থাপনা নির্মাণ সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিট কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম ১৪৪ ধারা অমান্যের ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন। যাতে সমস্যা দেখা দিলে তা দেখিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেওয়া যায়।

বিভিন্ন দুর্নীতিতে আলোচিত আরিফুল ইসলাম একাধারে রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্বেও ছিলেন। তিনি গত জুনে চট্টগ্রামে বদলি হয়েছেন।

এ ব্যাপারে তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।

জানতে চাইলে রফিকুল মাস্টার আলোকিত নিউজকে বলেন, তিনি বিট কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামের পরামর্শে আদালত থেকে আদেশ এনে কাজ করছেন। টাকা দিয়ে গেজেট কাটানোর একটা লাইনও করেছেন।

বর্তমান বিট কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি আসার আগে এসব হয়েছে। কাজ বন্ধের জন্য আদালত থেকে আদেশ আনার চেষ্টা করছি।

এলাকাবাসী জানান, রফিকুল মাস্টারদের দখল দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোর না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না।

আরও খবর