গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে দালাল আন্তার বাণিজ্য জমজমাট
আলোকিত প্রতিবেদক : সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে তার বসতবাড়ি। আশপাশের বনভূমি নিয়েই তার ব্যবসা।
তিনি হলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জাঙ্গালিয়াপাড়ার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে আন্তা আলী। এলাকাটি জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিটের অধীন।
মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে অসংখ্য মানুষ আর্থিক সংকটে পড়লেও তিনি আখের গুছিয়েছেন। বনের জমিতে বাড়ি নির্মাণের দালালি করে কামিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
সরেজমিনে জানা যায়, ওই এলাকায় চলতি বছর কিছু পাকা ও টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়িপ্রতি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা।
স্থাপনাগুলো হল বাংলাবাজারের উত্তরে মোকছেদ আলীর চার রুম, শামসুন্নাহারের চার রুম, এরশাদের তিন রুম, ইমান আলীর দুই রুম, সেলিমের তিন রুম, কাঠমিস্ত্রি আনোয়ারের দুই রুম, সখুমদ্দিনের মেয়ের জামাইয়ের তিন রুম ও মোহাম্মদ আলীর দুটি দোকান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব স্থাপনা থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে দখল হয়েছে প্রায় দেড় বিঘা বনভূমি।
পুরনো বুঝাতে কয়েকটি স্থাপনায় রঙিন ও ব্যবহৃত টিন ব্যবহার করা হয়েছে। এর বাইরে ১০-২০ হাজার টাকার বিনিময়ে পুরনো ঘর ও দোকানের টিন পাল্টানোর নজির অনেক।
এলাকাবাসী জানান, আন্তা বিট অফিসের চিহ্নিত দালাল। বনের জমিতে নতুন ঘর নির্মাণ, পুরনো টিন পাল্টানো ও টয়লেট নির্মাণ করলে তাকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে বিট অফিসের লোকজন এসে ভেঙে দেন।
তারা আরও জানান, করোনাকালে ওই বাড়িগুলো নির্মাণ করা হলেও বিট অফিস প্রতিরোধ বা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এভাবে দখল বছরের পর বছর চলতে থাকায় বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে শামসুন্নাহার আলোকিত নিউজের কাছে দাবি করেন, তাদের বাড়ি কালেক্টরি খাসে করা হয়েছে, নয় মাস আগে। দুটি কাগজ আছে, একটি কাগজ নেই। গেজেট হয়ে রয়েছে।
আন্তার মধ্যস্থতা প্রসঙ্গে বলেন, আন্তা ভাইকে যে কোন কাজে ডাকলে আসে, হেল্প করে। চা-পান খাওয়া, বাজারের চাল খরচ দেওয়া, এ রকম কিছু হালকা-পাতলা দিতে হয়।
মোহাম্মদ আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দোকান জোত জমিতে করা হয়েছে বলে দাবি করেন। সংযোগ কেটে যাওয়ার পর আবার ফোন করলে তিনি কল ধরেননি।
এদিকে গত বছরের ১৭ মার্চ আলোকিত নিউজ ডটকমে আন্তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ওপর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে ওঠে আসে খাসপাড়া মহল্লায় প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকার চাঁদাবাজি ও এলিগেন্স ফ্যাক্টরির বিপরীতে এরিস্টোফার্মার পাশের বন থেকে গজারি গাছ কেটে পাচারের চিত্র।
এরপর আন্তা কিছুদিন পালিয়ে থেকে এলাকায় ফিরেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বন বিভাগ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্তাকে সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকন প্রকাশ্যে প্রশ্রয় দিতেন। সুযোগ পেয়ে আন্তা ও সাবেক বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম বাণিজ্যে মেতে ওঠেন।
এমনকি আন্তা বন মামলার আসামি হলেও তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সাতটি আকাশমনি প্লট দেওয়া হয়। ফলে দরিদ্র লোকজন উপকারভোগীর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
এদিকে রওশন হাসপাতালের সামনের রাস্তা দিয়ে অল্প উত্তরে আন্তার দুটি দোকান রয়েছে। একটিতে তার স্ত্রী শাহনাজ টেইলার্সের ব্যবসা করেন।
দোকান দুটি জেলা প্রশাসনের ১ নং খতিয়ানভুক্ত জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে। সাথে বনভূমি। আন্তার ইচ্ছাই যেন সব!
অপরদিকে আন্তা তার বাড়ির কাছে পাঁচ রুমের একটি বাড়ি দখলে নিয়ে ভাড়া তুলছেন। বাড়িটি মোশারফ নামের একজন গেজেটভুক্ত বনভূমিতে নির্মাণ করেছিলেন।
মোশারফ আলোকিত নিউজকে জানান, খলিল নামের একজনের সাথে তার পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। পরে খলিল ও আন্তা মিলে বাড়ি দখল করেছেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত আন্তা আলী আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি কোন কাজ দেই না। মানুষের উপকার করা বাদ দিয়া দিছি।
মোশারফের বাড়ি দখল প্রসঙ্গে বলেন, আমি তিন লাখ ১১ হাজার টাকা দিয়া ঘর কিন্না নিছি। আমার ক্ষতি কইরেন না।
বিষয়টি নিয়ে বাউপাড়া বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবিরের সাথে আলোচনা করলে তিনি আলোকিত নিউজকে বলেন, আন্তা খুব খারাপ। সে আগে অনেক কিছু করেছে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে ডিএফওর আশকারায় দালাল আন্তার ব্যাপক চাঁদাবাজি!