কাপাসিয়ার বেলাশীতে বন উজাড় : ভূমি অফিস উদাসীন
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গজারি বন কেটে গাছ পাচারের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।
ভূমি অফিস কৌশলে অভিযুক্তদের পক্ষ নেওয়ায় বেহাত হচ্ছে মূল্যবান ভূমি ও বনজ সম্পদ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের বেলাশী মৌজার এসএ ৩৬৯ ও ৩৮২ নং দাগে মোট জমি ১২ বিঘা। দাগ দুটির আরএস যথাক্রমে ১০৫১, ১০৫২, ১১৮৬, ১২৭৭ ও ১২৭৮। ৩৬৯ নং দাগে আংশিক জোত। বাকি সব ‘খ’ তফসিলভুক্ত।
এর মধ্যে গজারি বন সাত বিঘার ওপরে। প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হাইয়ের বাড়ির দক্ষিণ পাশে অবস্থিত প্রাকৃতিক বনটিতে গাছের সংখ্যা দুই হাজারের অধিক।
কিছুদিন আগে অবৈধ দখলদাররা গাছগুলো সাড়ে ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। পরে মৈশন গ্রামের বাবুলের নেতৃত্বে পাচারকারী মতি ও মঞ্জু গাছ কেটে রাতের আঁধারে ট্রাকযোগে পাচার শুরু করেন।
ইতিমধ্যে অন্তত চার বিঘা বন থেকে প্রায় এক হাজার গাছ কাটা হয়েছে। কেটে নেওয়া গাছের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এতে পরিবেশ ও প্রতিবেশের বিপুল পরিমাণ ক্ষতিসাধন হয়েছে।
বিষয়টির ওপর গত ১৬ ডিসেম্বর আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর বনের ভেতরে স্তূপ করে রাখা ছোট-বড় তিন শতাধিক গাছ রাতারাতি পাচার হয়ে যায়।
এর আগের দিন ১৫ ডিসেম্বর ঘটনাটি রায়েদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আক্কাচ হোসেনকে জানালেও তিনি গাছ আটক করেননি।
আক্কাচ হোসেন আলোকিত নিউজকে বলেছেন, ভিপি সম্পত্তির ওই দাগগুলো আরএস রেকর্ডে অবমুক্ত হওয়া ‘খ’ তফসিলভুক্ত। তবে কারও নামে খাজনা-খারিজ নেই। কেউ মালিকানার কাগজপত্রও দেখাতে পারেনি।
এ অবস্থায় জমির দেখভালের দায়িত্ব কার? প্রশ্নটির সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিস।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর ফরহাদ শামীম আলোকিত নিউজকে বলেন, এত বেশি গাছ কাটার তথ্য তিনি নিউজের মাধ্যমে জেনেছেন। কিছু না জানানোর কারণে নায়েবকে চার্জ করেছেন।
এসিল্যান্ড আরও বলেন, যদি ‘খ’ তফসিলভুক্ত হয়, এটা সরকার নিতে পারবে না। যে কেউ এসে দাবি করতে পারে। ওটা অন্য কাউকেও দিতে পারবে না। ওটা ওভাবেই থাকবে। কিন্তু গাছ কাটতে পারবে না।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০১৩ জারি হওয়ার পর দফায় দফায় আবেদনের সময় বৃদ্ধি করা হয়। আইন অধিশাখা-৪ থেকে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত হয়।
‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তির করণীয় সম্পর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব ভোগদখলকারী তাদের মালিকানার সমর্থনে পরিপত্র জারির এক বছরের মধ্যে বৈধ প্রমাণপত্র বা দলিলাদি উপস্থাপনে ব্যর্থ হবেন, সেসব সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০-এর ৯২ ধারামতে খাস ঘোষণা করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র মাঠ পর্যায়ে যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে না। ওই ঘটনার ক্ষেত্রে ২০১৭ সালেই সময়সীমা পার হয়েছে। সরকারের স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন : কাপাসিয়ায় ‘ভিপি সম্পত্তির’ ৪ বিঘা গজারি বন উজাড়