শ্রীপুরে ‘বনখেকো’ ফরেস্টার মনির ও সেলিমের মিথ্যা মামলার দাপট!
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের শ্রীপুরে দখল বাণিজ্যের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে দুই সাংবাদিককে বন মামলায় আসামি করা হয়েছে।
শ্রীপুর রেঞ্জের সিংড়াতলী ও সদর বিট কর্মকর্তা আলোকিত নিউজ ডটকমের কণ্ঠ রোধ করতে পরিকল্পিতভাবে পরপর তিনটি মামলা করেছেন।
গত ১ জুলাই আলোকিত নিউজে ‘শ্রীপুরে বনভূমি দখলে প্রীতি গ্রুপের তালুকদারি’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সিংড়াতলী বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম আলোকিত নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মেহেদী হাসান সবুজের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন।
গত ৩১ জুলাই ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউছুপ স্বাক্ষরিত পিওআর মামলাটিতে চারজনের মধ্যে সবুজ দুই নম্বর আসামি। মামলা নম্বর ১৮২/১৯।
এতে বলা হয়, গত ২৫ জুন সকাল সাড়ে সাতটায় শ্রীপুর মৌজার মাধখলা এলাকায় দা দিয়ে গজারি কপিচ কেটে ঘর নির্মাণের অপচেষ্টা করা হয়। টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা দৌড়ে গজারি বনের ভেতরে আত্মগোপন করেন।
ঘটনাস্থল থেকে ১৩ বোঝা ছাটি কপিচ, ১৪টি সিমেন্টের খুঁটি, একটি শাবল ও একটি কোদাল জব্দ করা হয়েছে। কর্তনকৃত কপিচের মূল্য চার হাজার ৫৫০ টাকা এবং পরিবেশ ও বনের ক্ষতি আড়াই লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনাস্থলটি প্রীতি গ্রুপের দখলীয় স্থান থেকে কাছে। মামলার সাথে সংযুক্ত স্ক্যাচ ম্যাপ ধরে সেখানে গজারি কপিচ বা বনের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থলে মাটির পুরনো ঘর তিনটি। দক্ষিণ ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন মামলার এক নম্বর আসামি শহিদুল্লাহ।
উত্তর ঘরে তার বৃদ্ধ বাবা-মা ও পশ্চিম ঘরে থাকে আরেক ভাই আসাদুল্লাহর পরিবার। আশপাশের বাড়িগুলোও বনভূমিতে।
শহিদুল্লাহর বাবা-মা ও স্ত্রীসহ প্রতিবেশীরা আলোকিত নিউজকে জানান, সেখানে বহু আগে থেকেই বন নেই। গরিব মানুষ খালি জায়গায় পর্যায়ক্রমে বাড়িঘর করেছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনের সময় এলাকায় কিছু ঘর উঠেছে। তখন কারখানার শ্রমিক শহিদুল্লাহও তার ঘর সংলগ্ন পূর্ব পাশের খালি জায়গায় একটি টিনশেড ঘর করেন।
এই ঘরকে কেন্দ্র করেই ছয় মাস পর ঘটনা সাজিয়ে মামলা করে বিট অফিস। কাল্পনিক অভিযোগে সাংবাদিক সবুজকে করা হয় আসামি।
তার বাড়ি গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর হলেও মামলায় অস্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয়েছে মাধখলা। অথচ সেখানে অস্থায়ী ঠিকানা তো দূরের কথা, কোন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িও নেই।
আসামি ও তাদের স্বজনরা বলছেন, তারা সবুজকে চেনেন না। আট কিলোমিটার দূরের একজনকে মামলায় কীভাবে আসামি করা হল, তা-ও জানেন না।
তারা আরও বলেন, শহিদুল্লাহর ভাই আসাদুল্লাহ নতুন কোন ঘর না করলেও তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দেওয়া হয়েছে। বিট অফিসে টাকা দিয়ে বাড়ি করলে মামলা বা উচ্ছেদ হয় না, এমন নজির অনেক আছে।
ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, ওই মামলায় বিতর্কিত বনমালি হাসেম আলী মাদবরের ইন্ধন রয়েছে। নিউজ ডিলিটের অনুরোধ না রাখায় তিনিও ক্ষিপ্ত ছিলেন।
এদিকে গত ২৮ এপ্রিল আলোকিত নিউজে ‘শ্রীপুরে বনভূমি দখল করে আলিশান ও পাকা বাড়ি’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে সদর বিট কর্মকর্তা সেলিম মিয়া তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে সন্দেহ করে দৈনিক সোনালী কণ্ঠের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলামকে দুটি মামলায় আসামি করেন।
একটির ঘটনাস্থল সংবাদে উল্লেখিত পৌর এলাকার ভাংনাহাটিতে গেজেটভুক্ত বনভূমিতে আল আমিনের পাকা বাড়ি। অপরটির ঘটনাস্থল আট কিলোমিটার দূরে রাজাবাড়ী ইউনিয়নের ডোয়াইবাড়ী।
১৩২/১৯ নম্বর মামলায় বলা হয়, গত ২২ এপ্রিল দুপুর ১২টায় শ্রীপুর মৌজার সিএস ১৭৬৬ নং দাগের গেজেটভুক্ত বনভূমিতে ঘর নির্মাণের অপচেষ্টা করা হয়। আল আমিনের সাথে শফিক ফিতা দিয়ে ভূমির পরিমাপ করেন।
অথচ আলোকিত নিউজে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, তিন ফুট কলামের ওপরে বিম দিয়ে ইটের দেয়াল সাত ফুট উঠেছে। ছবিটি ২৩ এপ্রিল সকাল আটটা ৫৩ মিনিটে তোলা হয়।
নির্মাণ কাজের সাথে জড়িতরা বলেন, এক দিনেরও কম সময়ে কলাম ও বিম দিয়ে সাত ফুট দেয়াল নির্মাণ সম্ভব নয়। এসব উপযোগী হতে সময় লাগে কমপক্ষে এক সপ্তাহ।
সর্বশেষ খবর নিয়ে জানা যায়, আল আমিন নির্বিঘ্নে কাজ সম্পন্ন করে বাড়িটিতে বসবাস করছেন। সংবাদ প্রকাশের পর ব্যাক ডেটে পিওআর মামলা দিয়েই দায় সেরেছে বিট অফিস।
ওই দখলে যোগসাজশ থাকায় বিট কর্মকর্তা কোন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেননি। মামলায় প্রকৃত ঘটনা গোপন করায় মূল্যবান বনভূমি উদ্ধারের প্রসঙ্গও চাপা পড়েছে।
শফিক আলোকিত নিউজকে বলেন, আল আমিনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তার বাড়ি থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব পৌনে দুই কিলোমিটার। আর আমি তো রাজমিস্ত্রি নই যে মাপামাপি করব।
তিনি বলেন, ওই দাগের দখল নিয়ে আমিও নিউজ করেছিলাম। আলোকিত নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিট কর্মকর্তা আমাকে সন্দেহ করেন। তিনি ফোন করে দেখা করে নিউজ বন্ধ না হলে মামলার হুমকি দেন।
শফিক আরও বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও ৩১ অক্টোবর প্রধান বন সংরক্ষক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু অদ্যাবধি কোন তৎপরতার খবর পাইনি।
এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও সেলিম মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তারা মামলায় সাংবাদিকদের আসামি করা হয়নি বলে দাবি করেন।