গাজীপুরে কোর জোনে অবৈধ মীর রেডিমিক্স, বন-পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুর মহানগরীর মাস্টারবাড়ি বাজার থেকে অল্প দক্ষিণে উত্তর সালনা এলাকায় মীর রেডিমিক্স কারখানা।

কারখানাটি আইন লঙ্ঘন করে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এলাকা অর্থাৎ কোর জোনে ২০১৭ সালে গড়ে উঠেছে।

এতে একদিকে দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাউপাড়া বিটের বন ও পরিবেশ। অপরদিকে আশপাশের বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

সরেজমিনে জানা যায়, মীর গ্রুপ স্থানীয় রাশিদুল গংয়ের কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে কংক্রিট রেডিমিক্স কারখানা গড়ে তুলে। জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন শেখ কামাল ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার থেকে এর দূরত্ব আধা কিলোমিটারেরও কম। কারখানাটিতে দিন-রাত উৎপাদন চলে।

কারখানার উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে সংরক্ষিত বনভূমি। রয়েছে বাউপাড়া বিট অফিসের বড় নার্সারি।

কারখানাটির টিনের বাউন্ডারি সংলগ্ন উত্তর পাশের বনভূমি দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতিপূর্বে ছয়-সাত শতাংশ বনভূমিতে রোপিত বিভিন্ন প্রজাতির চারা বিনষ্ট হয়েছে।

দূষণে বন বিনষ্ট

কারখানার তরল বর্জ্য গেটের উত্তর পাশের বনভূমির মধ্য দিয়ে নালা কেটে নির্গত করা হচ্ছে। রাস্তার পশ্চিম পাশের নালাও বনভূমির মধ্য দিয়ে করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, কারখানাটির পাউডার-জাতীয় ডাস্ট ও শব্দ দূষণে অন্তত ১৫টি পরিবার ভোগান্তির শিকার। মাঝে-মধ্যে ঘর কেঁপে ওঠে। ঘুমন্ত শিশুরা বিকট শব্দে ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে।

কারখানার পূর্ব পাশে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন বাড়ির নিচ তলা সম্পন্ন করেছেন ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম। বিকট শব্দে সৃষ্ট কম্পনে তার বাড়িতে কয়েকটি ফাটল দেখা দিয়েছে।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, কারখানাটির ডাস্টের কারণে ঘরের জানালা খোলা রাখা যায় না। মাটির উর্বরাশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। ধানসহ বিভিন্ন ফল ও সবজির ফলন কমে গেছে।

এ ছাড়া কারখানার পশ্চিম দিকে অবস্থিত ভাওয়াল আইডিয়াল হাইস্কুলে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মীর রেডিমিক্স কারখানা বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলামের আমলে চালু করা হয়। তিনি আর্থিক সুবিধা নিয়ে যৌথ ডিমারকেশন ছাড়াই নির্মাণ কাজের অনুমতি দেন। অথচ ২০১২ সালের পর জাতীয় উদ্যানের দুই কিলোমিটারের মধ্যে এ ধরনের কারখানা স্থাপন ও পরিচালনা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

সূত্র আরও জানায়, কারখানাটির অবস্থানগত ও উৎপাদন সংক্রান্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই। প্রশাসন কখনো অভিযানও চালায়নি।

এ ব্যাপারে মীর রেডিমিক্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ আলোকিত নিউজের কাছে স্বীকার করেছেন, তাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও ডিমারকেশন নেই। বনের ছোট একটা ডোবায় কিছু পানি যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বন বিভাগের ১০টি চারা গাছ মারা গেলে আমরা দাম দিয়ে দিব। কিন্তু সেটা মরতে হবে তো, অ্যাভিডেন্স থাকতে হবে।

তবে একজন বন কর্মকর্তা বলেন, বন কারও ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, এটা রাষ্ট্রের সম্পদ। তাই ক্ষতি করে শুধু দাম দিয়ে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

এদিকে মীর রেডিমিক্সের বিরুদ্ধে সাবেক বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবির একটি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ১৪/১৮-১৯।

এতে মীর গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবা-ই জাহির, ডিজিএম আজাদ ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমকে আসামি করা হয়েছে। বন ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন দেখানো হয়েছে ১৪ কোটি টাকা।

আরও খবর