গাজীপুরে মাদবর এগ্রোর মুখে ‘দেড় বিঘা বনভূমি’ তুলে দিল বন বিভাগ!
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে বনের ব্যাপক ক্ষতিসাধনের পর এবার দেড় বিঘা বনভূমি দখলে নিয়েছে মাদবর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ।
ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিটের নলজানী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এ তাণ্ডব চললেও দেখার যেন কেউ নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদবর এগ্রোর চারপাশে সিএস ৭১৩ ও আরএস ১৮০০ নং দাগের সংরক্ষিত বনভূমি। পার্ট দাগটিতে বন বিভাগের জমি সাড়ে ছয় একর ও জোত জমি এক একর ৯০ শতাংশ।
কারখানার মালিকের পক্ষে জমি বিক্রেতা মিরাজ উদ্দিন মিলন ৮৩ শতাংশের ডিমারকেশন চেয়ে একটি সীমানা নির্ধারণী মোকদ্দমা করেন। মোকদ্দমা নং ১১৩/১৪-১৫।
পরে বন বিভাগের প্রতিবেদন ও যৌথ মাপজোখ শেষে ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন ডিমারকেশন অনুমোদন করে। এতে কারখানার পশ্চিম পাশের রাস্তা সংলগ্ন স্থাপনার অংশ ও পূর্ব পাশ দিয়ে আবেদিত জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর মালিক আওলাদ হোসেন মাদবর উত্তর-পূর্ব পাশে ডিমারকেশন বহির্ভূত অংশে একটি ছয় তলা ভবন নির্মাণ করেন। কাজ শুরুর পর ডিমারকেশনের আবেদন করলেও এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি।
ভবনটি নির্মাণাধীন অবস্থায় সংলগ্ন উত্তর পাশের প্রায় আধা বিঘা বনভূমি মাটি ফেলে দখল করা হয়। পরে সাবেক বিট কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন তাতে বাধা দিয়ে আকাশমনি চারা রোপণ করেন ও বাঁশ দিয়ে বেড়া দেন।
কিছুদিন পর চারাগুলো বিনষ্ট করে ফেলা হয়। এসব ঘটনায় একটি মামলার কথা শোনা গেলেও বিট অফিসে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত বছরের শেষ দিকে উত্তর পাশের বনভূমির ওপর দিয়েই ১২টি আকাশমনি ও একটি মেহগনি গাছের ডালপালা কেটে সাতটি খুঁটির নতুন বিদ্যুৎ লাইন টানা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দেওয়া হয়েছে সংযোগ।
এ ছাড়া নবনির্মিত ভবনের পূর্ব পাশে দুটি বড় আকাশমনি গাছ কেটে মিনি সিকিউরিটি রুম করা হয়েছে। গেটের পশ্চিম পাশে বনভূমি দখল করে করা হয়েছে মালবাহী গাড়ির স্ট্যান্ড।
বিষয়টির ওপর গত ২০ ডিসেম্বর আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সাবেক সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উল্টো ওপর মহলে কারখানার মালিকের হাত আরও পোক্ত হয়েছে। সম্প্রতি বীরদর্পে বিনষ্টকৃত বাগানের অংশ লোহার অ্যাঙ্গেল ও টিনের বেড়া দিয়ে দখল করে নিয়েছেন। স্থাপন করা হয়েছে ‘এফডি’ লেখা খুঁটি।
শুধু তাই নয়, কারখানার পূর্ব পাশে দখল করেছেন আরও এক বিঘা বনভূমি। স্থাপনা নির্মাণের লক্ষ্যে এখন ভেকু দিয়ে চলছে মাটি ভরাটের কাজ।
এদিকে কারখানার পূর্ব পাশে রয়েছে সরকারি খাল। কারখানার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে খাল ঘেঁষে ১৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
নকশা ও পূর্বের ডিমারকেশনের স্ক্যাচ ম্যাপ অনুযায়ী, ওই অংশে খাল সংলগ্ন ২০-৩০ ফুট করে অন্তত সাত শতাংশ বনভূমি রয়েছে। কিন্তু দখলের কারণে সেখানে বনভূমির কোন অস্তিত্ব নেই।
এভাবে মালিক দেড় বিঘা বনভূমি গ্রাস করেছেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য এক কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদবর এগ্রোকে একাধিক বন কর্মকর্তা প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন। দ্বিতীয় ডিমারকেশনের প্রতিবেদনে বন ও পরিবেশের কোন ধরনের ক্ষতি বা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে মতামত দেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, দখলীয় দেড় বিঘার বৈধতা পেতে এক ব্যক্তিকে দিয়ে আরেকটি ডিমারকেশনের আবেদন করা হয়েছে। যদিও প্রথম ডিমারকেশনের সময় এই জমি উপযুক্ত হিসেবে বন বিভাগ বুঝে নিয়েছে।
ডিমারকেশন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা আলোকিত নিউজকে বলেছেন, পার্ট দাগে ডিমারকেশনের নিয়ম হচ্ছে, বন বিভাগ প্রতিবেদন দিয়ে তাদের পুরো জমি আলাদা করে নিবে। রাষ্ট্রের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে আজকে এক অংশ, কালকে আরেক অংশ-এমন সুযোগ নেই।
অপরদিকে কারখানার মালিক পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য বন বিভাগের অনাপত্তি চেয়ে আবেদন করেছেন। বন কর্মকর্তারা দ্রুত অনাপত্তিপত্র দেওয়ার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজল তালুকদারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে গাছ কেটে মাদবর এগ্রোর বিদ্যুৎ লাইন, বন বিনাশ!