কাপাসিয়ায় গৃহ নির্মাণে হরিলুট : পিআইও বদলি, উত্তম বহাল!
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গরিবের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে হরিলুট ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাকি বিল্লাহকে অবশেষে ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে বদলি করা হলেও সহকারী প্রকৌশলী উত্তম কুমার আছেন বহাল তবিয়তে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি আলোকিত নিউজ ডটকমে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাবেক জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের নির্দেশে তদন্ত হয়।
তদন্তে সাবেক আরডিসি জান্নাতুল ফেরদৌস (বর্তমানে জেএম শাখা) প্রকৃত চিত্র এড়িয়ে যাওয়ায় অভিযুক্তদের বাণিজ্য অব্যাহত থাকে।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বললে তিনিও দুর্নীতির চিত্রে দৃষ্টিপাত না করে পক্ষ নেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের ওই তদন্ত ছিল লোক দেখানো। আলোকিত নিউজের প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় চাপ সৃষ্টি হয়।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে প্রায় পৌনে ৪০০ গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এ বরাদ্দ দিয়েছে। ঘরপ্রতি বাজেট ছিল এক লাখ টাকা।
বারান্দাসহ সাড়ে ১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ও সাড়ে ১০ ফুট প্রস্থের টিনশেডে পাকা ভিটি। সাথে টয়লেট।
প্রকল্পটির আহ্বায়ক ইউএনও ও সদস্যসচিব পিআইও। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন কমিটিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানও সদস্য।
তবে পিআইও বাকি বিল্লাহ ও প্রকৌশলী উত্তম কুমার ইচ্ছামত কাজ করেছেন। চেয়ারম্যানরা ছিলেন উপেক্ষিত।
সবচেয়ে বেশি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে ঘাগটিয়া ইউনিয়নে। সেখানে ঘর ১৬৯টি।
ঘরগুলো নির্মাণে ইস্টিমেট মানা হয়নি। এক নম্বর ইটের বদলে দুই ও তিন নম্বর ইট দেওয়া হয়েছে ব্যাপক হারে।
অনেক ঘরে পিকেট খোয়ার বদলে ব্যবহার হয়েছে পরিমাণে কম ও নিম্নমানের খোয়া। ইটের গাঁথুনি মাটির নিচ থেকে না দিয়ে ওপর থেকে বসানো হয়েছে।
প্রতিটি ঘরে আরসিসি খুঁটি ১৭টি। মাটির এক ফুট নিচ থেকে গোড়ায় ছয় ইঞ্চি করে ঢালাই না দিয়েই খুঁটিগুলো স্থাপন করা হয়েছে।
ঘরের ১২টি খুঁটির দৈর্ঘ্য থাকার কথা ১২ ফুট এবং বারান্দা ও টয়লেটের নয়টিতে ১০ ফুট। কিন্তু এক ফুট করে কম দেওয়া হয়েছে।
প্রতি ফুটে দাম পড়ে ৫০ টাকা। সে হিসাবে ২১ ফুট কম দিয়ে ঘরপ্রতি আত্মসাৎ করা হয়েছে এক হাজার ৫০ টাকা।
এ ছাড়া খুঁটিগুলোতে ছয় মিলির চারটি রড দেওয়ার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও দেখা গেছে দুটি। তা-ও আবার নিম্নমানের।
প্রতি ঘরে জানালা থাকার কথা চারটি। কিন্তু দুটি কম দিয়ে ঘরপ্রতি আত্মসাৎ করা হয়েছে ৭০০ টাকা।
ফ্লোরে তিন ইঞ্চির বদলে ঢালাই দেওয়া হয়েছে এক-দেড় ইঞ্চি। কিছু ঘরে দেখা গেছে নিম্নমানের কাঠ।
সিংহশ্রী ইউনিয়নে ৮৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তদন্তের পর পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও টয়লেটগুলোর কাজ সম্পন্ন হয়নি।
ঘরের চৌচালায় নয়টি টুয়ার দৈর্ঘ্য ৫৪ ফুট। দশমিক ৪৬ মিলির টুয়া ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও দশমিক ৩৬ ও মাঝে-মধ্যে দশমিক ৪২ মিলি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অপরদিকে সিংহশ্রীতে উপকারভোগীদের দিয়ে বালু কেনানো হয়েছে। ঘাগটিয়ায় কেউ কেউ কিনে দিয়েছেন ইট ও সিমেন্ট।
উপকারভোগীরা অভিযোগ করেন, দুর্নীতির কারণে ঘর টেকসই হয়নি। কাজ শেষ হতে না হতেই ফ্লোর ভেঙে ও দেবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। সে হিসাবে শুধু সিংহশ্রী ও ঘাগটিয়ায় হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্তত ৮৩ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর মানবিক প্রকল্পের কাজে এ ধরনের দুর্নীতি সংঘটিত হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে প্রচন্ড ক্ষোভ।