কাপাসিয়ায় গরিবের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে হরিলুট
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুখ খুলছেন না।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পে গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এ বরাদ্দ দিয়েছে।
ঘরপ্রতি বাজেট এক লাখ টাকা। বারান্দাসহ সাড়ে ১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের টিনশেডে পাকা ভিটি। সাথে টয়লেট।
নিয়ম অনুযায়ী, ১০ শতাংশের মধ্যে জমি থাকলেও যাদের ঘর নেই, তারাই উপকারভোগী। বাস্তবায়ন কমিটিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানও সদস্য।
এরই মধ্যে কিছু এলাকায় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঘাগটিয়া, কড়িহাতা ও সিংহশ্রী ইউনিয়নে চলছে দ্রুত গতিতে।
ঘাগটিয়ার জাবর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মিস্ত্রিরা দুই নম্বর ইট দিয়ে কাজ করছেন। কাঠ, বালু ও টয়লেটের রিং নিম্নমানের। ভিটিতে খোয়াও কম দেওয়া হচ্ছে।
ঘরের খুঁটিগুলোতে রড চারটির বদলে নিম্নমানের তিনটি। কোন কোনটিতে জিআই তার। আবার চারটি থাকলেও পরিমাপে কম অর্থাৎ চার মিলি। কেবল মাথার এক হাতে আট মিলি।
মিস্ত্রিরা জানান, গ্রামটিতে তারা ২০টি ঘরের কাজ করছেন। কাজগুলো পিআইও নিজে করাচ্ছেন। সাথে আছেন সহকারী প্রকৌশলী উত্তম কুমার।
কত খরচ হচ্ছে-এমন প্রশ্নের উত্তরে তাৎক্ষণিক হিসাব করে দেখালেন তারা। দেখা গেল, সর্বোচ্চ ব্যয় হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা।
তাহলে ঘরপ্রতি ৩০ হাজার টাকা যাচ্ছে কোথায়? এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ও কৌতূহল বিরাজ করছে।
প্রকল্পটির আহ্বায়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমত আরা ও সদস্যসচিব প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাকি বিল্লাহ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ অর্থবছর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। শত শত ঘর থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
লতাপাতা বাজার এলাকার স্যানিটারি ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা ব্রিজের রাবিশ দিয়ে খুঁটি তৈরির কাজ চলছে। পিআইও বা তার পছন্দের লোক যেভাবে চাচ্ছেন, সেভাবেই করে দেওয়া হচ্ছে।
ঘাগটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনুর আলম সেলিম আলোকিত নিউজকে বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রথম পর্যায়ে ঘর পেয়েছেন ১৬৯ জন। টয়লেটের চাকা ও খুঁটি সুবিধাজনক না।
তিনি আরও বলেন, আমি পিআইওর কাছে অবজেকশন দিয়ে পাল্টে দিতে বলেছি। সহকারী উত্তমকে স্পট দেখিয়েছি। গরিব মানুষকে নিম্নমানের দিবে কেন?
প্রকল্পের পুরো সময় ধরে কাপাসিয়ায় আছেন পিআইও বাকি বিল্লাহ। তিনি ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি যোগদান করেন।
এ ব্যাপারে বাকি বিল্লাহ আলোকিত নিউজকে বলেন, ইউএনও ম্যাডামের সাথে কথা বলেন। উনার অনুমতি ছাড়া কোন তথ্য দেওয়া যাবে না।
পরে ইউএনও ইসমত আরার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে যোগাযোগ করলে অপেক্ষা করতে বলেন।
কিছুক্ষণ পর এসে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়েও আর কোন সাড়া দেননি।
সচেতন মহল বলছেন, দুর্নীতির কারণে ঘরগুলো টেকসই হবে না। সরকারের মানবিক উদ্যোগ নিয়ে যারা বাণিজ্য করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
একটি সততা কাহিনি : আলোচিত প্রকল্পের কাজ নিয়ে যখন বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ উঠছে, তখন বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ঝিনাইদহের ইউএনও ওসমান গণি।
শৈলকুপা উপজেলায় একই বাজেটে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করায় টিনের বেড়ার বদলে নির্মিত হয়েছে ৩০৯টি আধা পাকা ঘর।
তারা হিসাব করে দেখেছেন, টিনের ঘর তৈরিতে ব্যয় হয় ৮০-৮৫ হাজার টাকা। সে অনুযায়ী কাপাসিয়ায় মানসম্মত ঘর করার পরও টাকা উদ্বৃত্ত থাকার কথা।