গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে আড়াই কোটি টাকার বনভূমি দখল : কর্তৃপক্ষ নীরব

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে আড়াই কোটি টাকা মূল্যের বনভূমি দখলের ঘটনায় গত দুই মাসেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিটের গজারিয়াপাড়া এলাকার মিয়াবাড়ি রোডে পিকনিক স্পটের নামে ৪২ শতাংশ বনভূমি দখলের ঘটনা ঘটে।

বিষয়টির ওপর গত ১ মে আলোকিত নিউজে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরে বন অধিদপ্তরের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক (ডিসিসিএফ) ড. জগলুল হোসেন গত ২ মে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দোকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ দেন।

রেঞ্জ অফিস সূত্র জানায়, আলোকিত নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর আর কোন তদন্ত হয়নি।

ফলে দখলীয় বনভূমি উদ্ধারের কোন তৎপরতা নেই। দায়ী কর্মকর্তারাও রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

জানতে চাইলে সিএফ মিহির কুমার দো আলোকিত নিউজকে বলেন, এই মুহূর্তে আমার কিছু মনে নেই। হয়তো ফাইল দেখতে হবে।

দখল কাহিনি : ফখরুল ইসলামের প্রস্তাবিত কটেজ এন্ড পিকনিক স্পটটির ভেতরে জমি প্রায় পাঁচ একর। এর মধ্যে সিএস ২২৬ ও আরএস ৪৫৫, ৪৫৬ ও ৪৫৭ নং দাগের ৪২ শতাংশ জমি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত। যার বর্তমান বাজারমূল্য আড়াই কোটি টাকার ওপরে।

স্পটটির চারদিকে সংরক্ষিত বনভূমি। ফখরুল ইসলাম বেশ কয়েক বছর আগে ওই জমি দখল করেন। পরে পশ্চিম পাশের প্রায় ২০০ ফুট ব্যতীত চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়।

চলতি বছরের এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে মালিক হঠাৎ অবশিষ্ট অংশে আরসিসি ওয়াল নির্মাণ করেন। খবর পেয়ে গত ১৪ এপ্রিল বিট অফিসের লোকজন গিয়ে এর বেশির ভাগ অংশ ভেঙে দেন।

এরপর কয়েক দিনের ব্যবধানে পুনরায় নির্বিঘ্নে নির্মাণ করা হয় আট ফুট উঁচু দেয়াল। এতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ।

এদিকে ফখরুল ইসলাম ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক বরাবর ডিমারকেশন চেয়ে একটি আবেদন করেন। যার সীমানা নির্ধারণী মোকদ্দমা নং ২৬/১৮। পরে ২০১৯ সালের শেষ দিকে আগের বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবির উপজেলা ভূমি অফিসে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এতে তিনি দখলীয় ৪২ শতাংশ সংরক্ষিত বনভূমি অবমুক্ত করা সাপেক্ষে ডিমারকেশনের পক্ষে মত দিলেও কিছু কারচুপির আশ্রয় নেন। স্পটটিতে বনভূমি ব্যতীত যাতায়াতের কোন রাস্তা না থাকলেও দক্ষিণ দিক দিয়ে রাস্তা ও চারদিকে বাউন্ডারি ওয়াল থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দখল পাকাপোক্ত করার উদ্দেশে অবশিষ্ট বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু আজাদুল কবিরের প্রতিবেদনকে ইস্যু করে দেয়াল আগে থেকেই ছিল, নতুন করে হয়নি-এমন তথ্য সাজিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে মর্দপাড়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ডিমারকেশন ছাড়াই ও বনের ক্ষতি করে বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

বিষয়টির ওপর গত ২১ এপ্রিল আলোকিত নিউজে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজল তালুকদারের নির্দেশে এসিএফ কাজ বন্ধ করে দেন।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের মর্দপাড়ায় বনের গাছ কেটে রাস্তা, ডিমারকেশন ছাড়াই বাড়িঘর!

কিছুদিন পর আবারও কাজ শুরু হয়। একটি পত্রিকায় কথিত প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রীন কোল্ড স্টোরেজের পূর্ব পাশে ফাউন্ডেশন বাড়ির নিচ তলার কাজ শেষ করে দ্বিতীয় তলারও ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।

এ ছাড়া রফিকের ফাউন্ডেশন বাড়ির কাজ এগিয়ে চলছে। বনের গজারি গাছ কাটার পরও শাহিদুলের কিছুই হয়নি।

এসব ঘটনায় বনপ্রহরী রনি ক্যাশিয়ার হিসেবে টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তাকে পার্ক বিটে বদলি করা হয়।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে ‘মোটা অঙ্কের লেনদেনে’ বনভূমি দখল!

আরও খবর