গাজীপুরে ‘বনের দাগে’ কোটি টাকার অধিগ্রহণ বিল!
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে বনের গেজেটভুক্ত দাগে ডিমারকেশন ছাড়াই প্রায় এক কোটি টাকার অধিগ্রহণ বিল উত্তোলন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখাকে ম্যানেজ করে একটি চক্র গ্যাসলাইন প্রকল্পের ওই চেক হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ।
সরকারের টাকা লুটপাটের এমন কিছু চিত্র নিয়ে আলোকিত নিউজের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্ব আজ।
স্পট নোয়াগাঁও : তিতাস গ্যাস লাইন স্থাপন প্রকল্পের জন্য ২০১৪-২০১৫ সালে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের নোয়াগাঁও পূর্বপাড়া বনভূমি অধ্যুষিত এলাকা।
সেখানকার অধিগ্রহণকৃত এসএ ৩৬১ নং দাগের জমি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে ব্যক্তি মালিকানার খাজনা-খারিজ।
কিন্তু ডিমারকেশন ছাড়াই ওই জমিকে জোত দেখিয়ে ক্ষতিপূরণ বিল বাবদ প্রায় এক কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
কাগজপত্রে চেক গ্রহণকারী হিসেবে স্থানীয় মৃত আবদুল মজিদের ছেলে মোস্তফা এবং মৃত আবদুল লতিফের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান গংয়ের নাম রয়েছে।
সিদ্দিকুর রহমান (৬৫) আলোকিত নিউজকে জানান, তারা মোট বিলের পরিমাণ জানেন না। আরএস ৮০৪, ৮০৫ ও ৮১২ নং দাগে একবার ৩৯ লাখ টাকা ও আরেকবার ১২ লাখ টাকা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ফেরদৌস ও জোনাকি নামের দুই দালাল তাদের বিলের কাজ করেছেন। এলএ শাখায় ঘুষ দেওয়ার কথা বলে আট লাখ টাকা কেটে রাখা হয়েছে।
অভিযুক্ত মোস্তফা ও তার ভাই শামসুলকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তারা সিদ্দিকুর রহমানের চাচাতো ভাই।
শামসুলের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তারা ৮০১, ৮০৪ ও ৮০৫ নং দাগে দুবারে জমি ও গাছপালার বিল নিয়েছেন। টাকার পরিমাণ জানা নেই। এলএ শাখা দখল অনুযায়ী বিল দিয়েছে।
এলএ শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৮০১ ও ৮০৪ নং দাগে মোস্তফা ও তার মা আনেছা খাতুনের নামে ২৬ লাখ ৩১ হাজার ২১০ টাকা তোলা হয়েছে। কয়েক দিন চেষ্টা করেও বাকি তথ্য পাওয়া যায়নি।
সিদ্দিক ও শামসুল জানিয়েছেন, বিল উত্তোলনের আগে তারা জমির ডিমারকেশনের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু অদ্যাবধি অনুমোদন হয়নি।
সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, পার্ট দাগে যৌথ ডিমারকেশন করে বন ও জোত আলাদা করতে হয়। ডিমারকেশন ব্যতীত বিল প্রদানের নিয়ম নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্যাসলাইনের পূর্ব পাশে ৩৬১ নং দাগে সিদ্দিকের এবং পশ্চিম পাশে একই দাগে মোস্তফা ও শামসুলের পৃথক বাড়ি। আশপাশের ভোগদখলীয় জমিও গেজেটভুক্ত।
বসতভিটা ও দখলীয় অংশ বাদ দিলে অধিগ্রহণকৃত অংশ বনভূমি হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু বিল প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের স্বার্থ রক্ষার বদলে ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে।
একজন বন কর্মকর্তা বলেন, গেজেটভুক্ত দাগে সিএস রেকর্ড অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা রয়েছে। আরএস রেকর্ডে সৃষ্ট কোন দাগ ব্যক্তির নামে হলে আদালতে মামলা করে খতিয়ান সংশোধনের রায় নিতে হয়। অন্যথায় বন বিভাগের কর্তৃত্ব বলবৎ থাকে।
প্রকল্পটির বিল প্রদানের দায়িত্বে ছিলেন সার্ভেয়ার জাকির হোসেন। তিনি বদলি হয়ে এখন বরিশালের ঝালকাঠি সদরে কর্মরত আছেন।
একাধিক সার্ভেয়ার জানান, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজিম ও জাকির হোসেনের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে ২০১৮ সালে ওই বিল ছাড় করা হয়েছে। আনোয়ারুল আজিম ইতিপূর্বে অবসরে চলে গেছেন।
এ ব্যাপারে সার্ভেয়ার জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন : গাজীপুরের সাফারি পার্ক রোডের অধিগ্রহণ বিলে রফিকের কারসাজি