বন্যপ্রাণী বিভাগের গাজীপুরে ডিমারকেশন বাণিজ্য জমজমাট
আলোকিত প্রতিবেদক : বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের গাজীপুরে ডিমারকেশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামাফিক চলছে সীমানা নির্ধারণের নামে বনভূমি বেহাতের লাগামহীন কর্মকাণ্ড।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুরে বন বিভাগের সাথে ব্যক্তি মালিকানা জমি নিয়ে জটিলতা অনেক। নিয়ম অনুযায়ী, জোত মালিককে ডিমারকেশনের জন্য জেলা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা অর্থাৎ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করতে হয়।
পরে জেলা প্রশাসক জমি মাপজোখ করার জন্য আরডিসি ও এসিল্যাণ্ডকে দায়িত্ব দেন। একই সাথে বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়।
কিন্তু ডিএফও জহির উদ্দিন আকন দীর্ঘদিন ধরে জেলা প্রশাসকের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। তিনি নিজে বা তার প্রতিনিধি হিসেবে রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল হাসেম ও বিট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ডিমারকেশন করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা ব্যতীত ডিমারকেশনের এখতিয়ার কারও নেই। কিছু দখলদার ডিএফওকে ম্যানেজ করে ‘এফডি’ লেখা পিলার পুঁতে কথিত বৈধতা বাগিয়ে নিচ্ছেন।
হেলথকেয়ার কাহিনি : জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিটের গজারিয়া পাড়ায় হেলথকেয়ার ফার্মা অবস্থিত। কারখানাটি ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত বনভূমি দখল করেছে। কোর জোনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গড়ে তুলছে কয়েকটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন।
বিষয়টি নিয়ে গত বছরের ২৭ মে আলোকিত নিউজ ডটকমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তৎপর হয় বন বিভাগ। এক পর্যায়ে ‘আইওয়াশ’ হিসেবে দখলীয় স্থাপনার বাইরে কিছু আকাশমনি চারা রোপন করা হয়। পরে চারাগুলো ধীরে ধীরে মরে যায়।
এক বছর পর চলতি বছরের জুলাইয়ে হেলথকেয়ারকে সীমানা পিলার দিয়েছেন ডিএফও। অবৈধ স্থাপনা বহাল রেখে ফুল বাগানের ভেতরে রোপন করা হয়েছে ওষুধি ও ফলজ গাছের চারা।
বনজ বাদ দিয়ে ওষুধি গাছ রোপনের কারণ জানতে চাইলে বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম আলোকিত নিউজকে বলেন, হেলথকেয়ারের মালিকের সাথে কথা বলে চারাগুলো রোপন করা হয়েছে। আগে তো আমাদের ভেতরে ঢুকতে হবে।
অরণ্য বিলাস কাহিনি : গজারিয়া পাড়ায় ইনডেক্স গ্রুপের বাংলোবাড়ি ‘অরণ্য বিলাস’ ২০ শতাংশ বনভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে। গত জুনে তাদেরকে সীমানা পিলার দেওয়া হয়। দখলীয় স্থাপনা বহাল রেখে ফুল বাগানের ভেতরে রোপন করা হয় ওষুধি ও ফলজ গাছের চারা। এরপর বনভূমি উদ্ধার দেখিয়ে ফেসবুকে চালানো হয় প্রচার।
এদিকে ডিএফওর ভূমিকায় অসন্তুষ্ট জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।
একাধিক বন কর্মকর্তা জানান, ডিএফও এভাবে বিধি লঙ্ঘন করে পিলার ও কাঁটাতারের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ছত্রছায়ায় রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল হাসেমও বেপরোয়া।
এসিআরে ঘাপলা : ডিএফও জহির উদ্দিন আকনের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে ঘাপলা রয়েছে। সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুছ আলী বনভূমি জবর দখলের সাথে তার সম্পৃক্ততার তথ্য উল্লেখ করেন। পরে তিনি পতিত বনভূমিতে করা বাগানকে উদ্ধার দেখিয়ে একাধিক পত্রিকায় নিউজ করান। এখন চলছে পদোন্নতির পাঁয়তারা।
বিষয়গুলো নিয়ে ডিএফওর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আপনি আমাকে কোয়ারি করছেন কেন? এরপর কথা বলায় অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।