কালিয়াকৈরে গাছ কেটে আফতাব গ্রুপের বন দখল, রক্ষকরা নীরব

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শিল্প প্রতিষ্ঠান আফতাব গ্রুপের বিরুদ্ধে গজারি গাছ কেটে বনভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।

কালিয়াকৈর রেঞ্জের মৌচাক বিটের দক্ষিণ ভান্নারা এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সরেজমিনে জানা যায়, বনফুল বাজার থেকে পশ্চিম দিকে আফতাব গ্রুপের আলিব কম্পোজিট লিমিটেড। মালিক ২০২১ সালে পূর্ব পাশে কারখানা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেন।

সম্প্রসারিত স্থান ঘেঁষে উত্তর পাশে আরএস ১৪০৮ নং দাগের ও দক্ষিণ পাশে ১৩০৮ নং দাগের সংরক্ষিত গজারি বন। পূর্ব পাশেও বনভূমি। আরএস ১৩০৬ ও ১৩০৭ নং দাগের জোত জমিতে কাজ চলমান অবস্থায় গত মার্চ-এপ্রিলের দিকে উত্তর পাশের বনের ৩০-৩৫টি জীবিত ও মৃত গাছ কেটে উজাড় করা হয়। দুই মাস পর ফেলা হয় বালু।

এক পর্যায়ে সাবেক বিট কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান মানিক গিয়ে বাধা দেন। পরে রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম দোলনকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় এক বিঘা বনভূমিতে দেড় শতাধিক আকাশমনি চারা রোপণ করা হয়।

কিছুদিন পর কারখানার লোকজন চারাগুলো তুলে ফেলেন। এরপর ওই বনভূমিতে ইট-সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

এবার বিট ও রেঞ্জ কর্মকর্তা আর বাধা দেননি। টিন দিয়ে বেড়া দিয়ে ও কাপড় দিয়ে ঢেকে বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ এগিয়ে চলছে। হুমকির মুখে পড়ছে বন ও পরিবেশ।

কারখানার মূল অবকাঠামোর কাজ সম্পন্ন

জানতে চাইলে কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ আলোকিত নিউজকে বলেন, তাদের ডিমারকেশন ২০২১ সালে করা হয়েছে। গাছ কাটা হয়নি ও রোপণকৃত চারাগুলো চারার জায়গায় আছে।

তবে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের কোথাও ডিমারকেশনের খুঁটি পাওয়া যায়নি। দখলীয় অংশের বাইরে উপকারভোগী ফরিদের বাড়ির পাশে কিছু কিছু চারা দেখা গেছে।

ফরিদকে হাতে রাখতে বনের জমিতে একটি পাকা দোকান নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কারখানার পাশে বনের জমিতে আরেকটি টিনশেড দোকান করেছেন আব্বাস আলী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যৌথ ডিমারকেশনে বন বিভাগের সার্ভেয়ারের সাথে এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার থাকেন। কিন্তু বিট কর্মকর্তা মানিক সার্ভেয়ার আওলাদ হোসেনকে নিয়ে মাপজোখ করলেও এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার দেখা যায়নি।

সূত্র আরও জানায়, বিট কর্মকর্তা মানিক ও রেঞ্জ কর্মকর্তা দোলন ওই ঘটনায় মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্ত ও মাপজোখ হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

ডিমারকেশনের খুঁটি ছাড়াই চলছে কাজ

একাধিক বনপ্রহরী বলেন, বিট কর্মকর্তা মানিকের আমলে ব্যাপক দখল বাণিজ্য হয়েছে। তিনি ইতিপূর্বে একই রেঞ্জের কালিয়াকৈর চেকপোস্টে বদলি হয়েছেন। বিট কর্মকর্তা থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়ে দোলনও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

এ ব্যাপারে সাবেক বিট কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান মানিকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।

রেঞ্জ কর্মকর্তা আশরাফুল আলম দোলন আলোকিত নিউজকে বলেন, আলিব গার্মেন্টসের ডিমারকেশন আছে। ফাইল আমার কাছে থাকে না। ডিএফও অফিস থেকে এনে চেক করতে হবে।

গাছ কাটা ও আকাশমনি চারা তুলে ফেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা তাদের জায়গায় কাজ করছে। আপনারা যেহেতু বলছেন, আমি দেখব। বিট অফিসে যান, বলে দিচ্ছি।

পরে বিট অফিসে গিয়ে বর্তমান বিট কর্মকর্তা শহীদুল আলমের সঙ্গে কথা হয় আলোকিত নিউজের। তিনি সেটেলমেন্ট রেকর্ডের কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে তথ্যগত সহযোগিতা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান।

আরও খবর