গাজীপুরে নিটলের ডিপো ঘিরে বন উজাড়ের মচ্ছব!
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে নিটল মটরসের ডিপোকে ঘিরে গাছ কেটে বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে।
জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এ ঘটনা চললেও দেখার যেন কেউ নেই।
বিষয়টির ওপর গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা গত ৩১ অক্টোবর সরেজমিনে তদন্ত করলেও অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে জানা যায়, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গত বছর নিটল মটরসের ডিপো গড়ে উঠেছে। এটি আগে কোনাবাড়িতে ছিল।
এখান থেকে বাস, ট্রাক, পিকআপ ও হিউম্যান হলার ডেলিভারি করা হয়। ডিপোটির আয়তন এক একর ৪৩ শতাংশ।
এর চারপাশে সংরক্ষিত বনভূমি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়াই প্রাচীর নির্মাণ করায় বনে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এতে সৃষ্ট বিরূপ প্রভাবে দেদারসে মরছে মূল্যবান গজারি গাছ। হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ।
অথচ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী, উদ্যান থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত কোর জোন। এর মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনা নিষিদ্ধ।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, ডিপোর পশ্চিম পাশে মৃত দাঁড়িয়ে আছে শতাধিক গাছ। কিছু গাছ সম্প্রতি কেটে নেওয়া হয়েছে। গোড়া ও মোথা অর্ধশত।
এভাবে প্রায় আড়াই বিঘা বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিনষ্ট হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। ঘটছে শব্দ দূষণ।
ডিপোর দক্ষিণ পাশেও গাছ মরছে। মৃত দাঁড়িয়ে আছে অন্তত ২১টি। উজাড় হয়েছে আধা বিঘারও বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন স্থাপনা নির্মাণের আগে বন বিভাগের সাথে ডিমারকেশন করা হয়নি। বন কর্মকর্তারাও কোন বাধা দেননি।
সাবেক বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম ও অবসরে যাওয়া বনপ্রহরী নুরুল ইসলাম আট লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে প্রচার রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিটল মটরস শুরুতেই বনভূমি দখল করেছে। ১০/০৭ নম্বর উচ্ছেদ মামলার প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে করা জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ তালিকায়ও তাদের নাম রয়েছে।
এ ছাড়া জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় নিটল মটরসের আপত্তির প্রেক্ষিতে পুনরায় সরেজমিনে তদন্ত ও পরিমাপ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা এক যুগ ধরে আটকে আছে।
বর্তমান বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবির আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি তাদেরকে বলে পানি নিষ্কাশনের জন্য ডিপোর ভেতর দিয়ে ড্রেন করিয়েছি। আগে কিছুই করা হয়নি।
একজন বন কর্মকর্তা বলেন, যেখানে আইনত ডিপো চালু করারই সুযোগ নেই, সেখানে ড্রেন কোন সমাধান নয়। বনের ব্যাপক ক্ষতিসাধনের ঘটনায় মামলা করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থলটি রেঞ্জ অফিসের কাছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকনের ভূমিকাও রহস্যজনক।