গাজীপুরে ৮ কোটি টাকার বনভূমিতে প্যারামাউন্টের স্থাপনা নির্মাণ চলছেই
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে চার বিঘা বনভূমি দখল করে প্যারামাউন্ট অ্যাপারেলসের ভবন নির্মাণ চলছেই।
ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিটের বানিয়ারচালা এলাকায় গত সাড়ে চার মাস ধরে এ দখলযজ্ঞ চললেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি বন বিভাগ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এমসি কারখানার উত্তর পাশে মাহনা ভবানীপুর মৌজার সিএস ৪১৪ নং দাগের চার বিঘা গেজেটভুক্ত বনভূমিতে গত বছরের অক্টোবর থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ক্রয় সূত্রে মালিকানা দাবি করে এসপি গ্রুপের প্যারামাউন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ কেটে জমি দখলে নেয়।
ইতিমধ্যে চারদিকে ১০-১৫ ফুট উচ্চতার আরসিসি বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভেতরে ছয় তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ভবন নির্মাণ শুরু হলেও আপাতত গোডাউন হিসেবে নিচ তলার কাজ শেষ করা হচ্ছে।
ওই এলাকায় বর্তমানে বিঘাপ্রতি জমির বাজারমূল্য দুই কোটি টাকা। সে হিসাবে শুধু দখলীয় জমির মূল্য দাঁড়ায় আট কোটি টাকা।
বেড়ার নামে এত কিছু!
গত অক্টোবরে প্যারামাউন্ট যখন বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ শুরু করে, তখন বিট অফিস কাজ বন্ধ রাখতে একটি নোটিশ দেয়। এতে পাকা স্থাপনার বদলে বেড়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার সাহা হাইকোর্টে একটি রিট করেন। পরে গত ১৫ ডিসেম্বর নোটিশের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন আদালত।
এরপর মালিক অস্থায়ী বাউন্ডারি ওয়ালের বদলে স্থায়ী বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ সম্পন্ন করেন। একই সাথে ভবন নির্মাণের বিষয়ে কোন নির্দেশনা না থাকলেও কাজ দ্রুতগতিতে অব্যাহত থাকে।
এদিকে বিষয়টির ওপর গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এর আগে ঘটনা অনুসন্ধানকালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে আলোকিত নিউজ। পরে ২২ ফেব্রুয়ারি বিট কর্মকর্তা শাহান শাহ আকন্দ প্যারামাউন্টের এমডিসহ চারজনের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেন। ডাইরি নং ১১৯৮।
রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানা ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজল তালুকদার আলোকিত নিউজকে বলেন, সরকারি সম্পদ রক্ষায় তাদের কোন গাফিলতি নেই। কয়েকটি পিওআর মামলা দেওয়া হয়েছে। জিডির বিষয়ে পুলিশ কোন সহযোগিতা করছে না।
তারা আরও বলেন, প্যারামাউন্টের নিষেধাজ্ঞা বাতিলের জন্য হাইকোর্টে বন বিভাগের ব্যারিস্টারের কাছে সকল কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। বাতিল হলেই স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে সেখানে ঢুকলে আদালত অবমাননা হবে।
অপরদিকে পুলিশ বলছে, প্যারামাউন্ট প্রথমে বাউন্ডারি ওয়াল ও পরে ভবন নির্মাণ করছে। বন বিভাগ শুরুতে প্রতিরোধ না করে জটিলতা বাড়িয়ে চার মাস পর জিডি করেছে।
তা ছাড়া এত বড় ঘটনায় বন বিভাগ তাদের রেঞ্জের ফোর্স ব্যবহার করতে পারত। নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে শুধু পুলিশের ওপর দোষ দিলে হবে না।
বিস্তারিত শুনে ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম মোল্লাহ আলোকিত নিউজকে বলেন, হাইকোর্ট শুধু বন বিভাগকে বেড়াজাতীয় তথা অস্থায়ী বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে বাধা না দিতে বলেছেন। কিন্তু রিটকারী নিজেই আদেশ ডিঙিয়ে স্থায়ী বাউন্ডারি ওয়াল ও ভবন নির্মাণ করছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিলে আদালত অবমাননা হওয়ার কথা নয়।
তিনি বলেন, বন বিভাগের যুক্তি অনুযায়ী তারা সেখানে ঢুকলে যদি আদালত অবমাননা হয়, তাহলে পুলিশ গেলেও তো আদালত অবমাননা হবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ও সময়ক্ষেপণে কারখানা কর্তৃপক্ষ বড় ফায়দা নিচ্ছে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে ‘৪ বিঘা বনভূমিতে’ গড়ে উঠছে প্যারামাউন্টের ৬ তলা!