শ্রীপুরে জীবনের শেষ দিনগুলো হাঁটতে চান মুক্তিযোদ্ধা বারেক

শাহাদাত হোসেন সাদেক, শ্রীপুর : যে ব্যক্তি ভূখন্ডের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে নিয়ে দৌড়েছেন, আজ তিনি হাঁটতে চান।

নিজের সহায়-সম্বল বিক্রি করেছেন। এখন ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আবদুল বারেক। গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের বাসিন্দা।

গত প্রায় তিন বছর ধরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে হুইলচেয়ারে দিন কাটছে তার।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আরেকবার অস্ত্রোপচার করলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন আবদুল বারেক।

১৯৭১ সালে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩ নং সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ও সেকশন কমান্ডার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধার ছেলে কাজল মিয়া জানান, গোসলখানায় পা পিছলে পড়ে কোমরের হাড় ভেঙে যায় তার বাবার। পরে জমি বিক্রি করে দুবার বেসরকারিভাবে চিকিৎসা করা হয়। ভাঙা অংশে লাগানো হয় স্টিলের প্লেট।

তাতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়। তবুও চিকিৎসা সফল হয়নি। এখন তৃতীয়বার অস্ত্রোপচারের কথা বলছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু টাকার অভাবে আর পারছেন না। তার বাবা হাঁটার জন্য প্রতিদিন কান্না করেন।

আবদুল বারেকের তিন ছেলে কৃষি কাজ করেন। তারা সংসার নিয়ে আলাদা। প্রতি মাসে পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ওষুধ কিনতেই ব্যয় হয়ে যায়। তার স্ত্রীও অসুস্থ।

সাংবাদিকরা তার বাড়িতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই বীর। তিনি বলেন, যখন সুস্থ ছিলাম, তখন সবাই খবর নিত। এখন অসুস্থ থাকলেও কেউ খবর নেয় না।

আবদুল বারেক বলেন, একাত্তরে যুদ্ধের মাঠে মরে গেলেও আফসোস থাকত না। এখন চিকিৎসার অভাবে মরতে হচ্ছে। আমার খুব ইচ্ছা হয়, জীবনের শেষ দিনগুলো যদি হাঁটতে পারতাম।

তেলিহাটি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল আউয়াল মৃধা বলেন, আবদুল বারেকের চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তা চেয়েও পাইনি। পরে নিজেরাই টাকা তুলে সহায়তা করেছি। রাষ্ট্র তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে আমরা শান্তি পেতাম।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আবদুল বারেক আবেদন করলে তাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। খবর নিয়ে আবদুল বারেককে উপজেলা পরিষদ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা করা হবে।

আরও খবর