গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে দখল বাণিজ্য ধামাচাপার পাঁয়তারা

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে মূল্যবান বনভূমিতে সহিদ হাজির পাঁচ তলা বাড়ির নির্মাণ কাজ আবারও শুরু হয়েছে।

জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিটের বাংলাবাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ধীরে ধীরে চলছে এ দখলযজ্ঞ।

বিষয়টির ওপর গত বছর আলোকিত নিউজ ডটকমে তিনটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দেয় বন বিভাগ।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবির পিওআর মামলার পাশাপাশি সদর থানায় দখল ও সরকারি কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে মামলা করেন।

কিন্তু কোন মামলাতেই গ্রেফতার হননি সহিদ হাজি। কয়েক মাস নীরব থাকার পর পুনরায় কাজ শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, নগরীর বাংলাবাজার এলাকার সিএস ২৩০ নং দাগের ছয় শতাংশ জমিতে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। জমিটি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত।

একই দাগে কাউন্সিলর মোশারফ হোসেনের ভাগিনা মোস্তফার চার তলা বাড়ির তৃতীয় ও চতুর্থ তলার কাজও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। বিট অফিস কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

দখলীয় স্থাপনা দুটিতে জমির পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ। যার স্থানীয় বাজারমূল্য অন্তত ৩৫ লাখ টাকা।

কাজ বন্ধের সময় নির্মাণাধীন বাড়ি

গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সহিদ হাজির বাড়ির কাজ যখন বন্ধ করা হয়, তখন নিচ তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছিল। বাকি অংশ ছিল ফাঁকা।

গত সপ্তাহে গিয়ে দেখা যায়, ইটের গাঁথুনি দিয়ে বাড়িটির দেয়ালের পুরো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফ্ল্যাট প্রস্তুত হচ্ছে। যে কোন সময় প্লাস্টার করা হবে।

এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবির ইতিপূর্বে আলোকিত নিউজকে বলেছেন, তিনি খবর পেয়ে গত ২২ জুলাই দেয়াল ভেঙে দিয়েছেন। আবারও মামলা দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই অভিযান ছিল লোক দেখানো। মূল দেয়াল না ভেঙে রুমের ভেতরের দেয়ালের কিছু অংশ ভাঙা হয়। পরে আর পা পড়েনি।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে দখল বাণিজ্যের তদন্তে এসিএফের কারসাজি

আন্তা কাহিনি ধামাচাপার পাঁয়তারা : গত ৬ অক্টোবর আলোকিত নিউজে ‘গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে দালাল আন্তার বাণিজ্য জমজমাট’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরে সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার ঘোষ তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে ৮ অক্টোবর জাঙ্গালিয়াপাড়া এলাকা পরিদর্শন করেন।

বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবির ৯ অক্টোবর দৈনিক খোলা কাগজে একটি প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি দেন। সহিদ হাজির দখলের ঘটনায়ও তিনি ওই পত্রিকায় প্রতিবাদ দিয়েছিলেন।

কথিত প্রতিবাদে দুর্নীতি ঢাকতে ব্যাপক মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সব স্থাপনা তার আগে নির্মিত হয়েছে, সিএস ৩০৩ নং পার্ট দাগের স্থাপনাগুলো জোত জমিতে পড়েছে-এমন দায়সারা বক্তব্য দিয়ে জড়িতদের বাঁচানোর পাঁয়তারা চলছে।

প্রশ্ন উঠেছে, বিট কর্মকর্তা যৌথ ডিমারকেশন ছাড়াই দখলীয় ভূমিকে জোত দেখাচ্ছেন কীভাবে? এ ছাড়া তদন্ত চলাকালীন সময়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত টাকা খরচ করে প্রতিবাদ ছাপানোও নিয়মবহির্ভূত।

জানতে চাইলে এসিএফ শ্যামল কুমার ঘোষ আলোকিত নিউজকে বলেন, মনে হয় টিন পাল্টানো হয়েছে। জমি কার, কাগজপত্র দেখতে হবে।

একজন বন কর্মকর্তা বলেন, অতীতে এসিএফের অধিকাংশ তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। যদি বাড়ির টিনও পাল্টানো হয়ে থাকে, তাহলেও বনভূমি উদ্ধার না করে দখল পোক্ত করার সুযোগ দেওয়া অপরাধ।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে দালাল আন্তার বাণিজ্য জমজমাট

আরও খবর