কাপাসিয়ায় কাশেমের খাস বনের গাছ পাচার চলছেই, ইউএনও নীরব
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের কাপাসিয়ায় খাস গজারি বনের বহুল আলোচিত গাছ পাচারকারী আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
ফলে উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের দেওনা ও বাঘিয়াসহ কয়েকটি এলাকার বনজসম্পদ উজাড় অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে বিষয়টির ওপর গত ৩০ নভেম্বর আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এ নিয়ে চলে ব্যাপক তোলপাড়। পরে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় তার দৌরাত্ম্য আবার বাড়তে শুরু করে।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সরকারের ১ নং খাস খতিয়ান অধ্যুষিত অন্যতম ইউনিয়ন তরগাঁও। দেওনা ও বাঘিয়ায় রয়েছে বিপুল পরিমাণ গজারি বন। ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই বনগুলোকে চালা বা চাষাবাদের জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে।
পরে বন্দোবস্ত গ্রহীতারা শত শত গাছ বিক্রি করে দেন। বাঘিয়া এলাকার বাসিন্দা কাশেম গাছগুলো অবৈধভাবে কেটে বিভিন্ন স্থানে পাচার করেন।
কাচারি বাজার থেকে আশ্রয়ণ কেন্দ্র রাস্তায় অজির টেকে এসএ ৩৪০ নং দাগে চার বিঘা গজারি বন ছিল। দেওনা সরকারবাড়ির ইব্রাহীম মাস্টার গং ২০১১-১২ সালে ওই জমি ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত নেয়।
গত বছর তারা ছোট-বড় প্রায় ৩০০ গাছ কাশেমের কাছে বিক্রি করেন। গাছ কাটার খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর ফরহাদ শামীম গিয়ে বাধা দেন। পরে তিনি বদলি হলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আক্কাস আলীর সহায়তায় সেপ্টেম্বরে গাছগুলো পাচার করা হয়।
ইব্রাহীম মাস্টার ভূমিহীন নন। তিনি ফকির সাহাব উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তারা ভূমিহীন সেজে বন বন্দোবস্ত নিয়েছেন।
তিনি আলোকিত নিউজকে বলেন, গাছ কাটার ঘটনায় কোন সমস্যা হয়নি। গত মাসে নায়েব জমির খারিজও করে দিয়েছেন।
একইভাবে দেওনা গড়পাড়া এলাকার আবদুস সোবহান তিন বিঘা গজারি বন বন্দোবস্ত নিয়ে কপিচসহ প্রায় এক হাজার গাছ কাশেমের কাছে বিক্রি করেন। পরে গত অক্টোবরের শেষ দিকে গাছগুলো কেটে পাচার করা হয়।
এলাকাবাসী জানান, কাশেম দেওনা ও বাঘিয়াসহ আশপাশের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে পাচার করছেন হাজার হাজার গাছ। তিনি জোত থেকে গাছ কিনলেও পারমিটের ধার ধারেন না। প্রশাসন বনজসম্পদ রক্ষার বদলে পাচারে সহযোগিতা করছে।
স্থানীয় একজন বলেন, কাশেম বাঘিয়ার জামালের বাড়ির পাশের বন থেকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে অবৈধভাবে গাছ কেটে পাচার করেন। বেশ কিছু গাছ স্পটে রাখা ছিল। তিনি পরদিন ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ খানকে জানান।
ছবি তুলে তার ম্যাসেঞ্জারেও দেওয়া হয়। পরে তিনি লোক পাঠানোর কথা বলে আর পাঠাননি। দুই দিন পর নায়েব গিয়ে কাশেমের সাথে দেখা করে চলে আসেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে বাঘিয়ার বাইন্নার টেক ও হিরণের বাড়ির পাশের বন থেকে দুই শতাধিক গাছ কাটার ঘটনা ইউএনওকে জানায় আলোকিত নিউজ। পরে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও গাছগুলো নিরাপদে পাচার হয়ে যায়।
বন কর্মকর্তারা বলছেন, তরগাঁও ইউনিয়নে তাদের কোন বন বা জমি নেই। যা আছে, তা ১ নং খতিয়ানভুক্ত ও ব্যক্তির। তাই সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, ইউএনও উপজেলা বন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। ১ নং খতিয়ানের বন সংরক্ষণ ও দেখভালের এখতিয়ার তার। প্রশাসন চাইলে অনেক কিছুই পারে।
এদিকে খাস জমি বন্দোবস্ত নীতিমালা বলছে, বন শ্রেণির ভূমি বন্দোবস্ত দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেউ তথ্য গোপন করে নিলে যে কোন সময় বন্দোবস্ত বাতিল ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুন সরদারের সাথে মোবাইলে দুই দিন যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি। বিষয় উল্লেখ করে ম্যাসেজ দিলেও সাড়া দেননি।
আরও পড়ুন : কাপাসিয়ায় বনকে চালা দেখিয়ে লিজ, কাশেমের গাছ পাচার জমজমাট