কালিয়াকৈরের জাথিলা বিটে ফরেস্টার এমদাদের ‘নীরব’ বাণিজ্য
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বনের জমি দখল করে দেদারসে বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
উপজেলার কাঁচিঘাটা রেঞ্জের জাথিলা বিট এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে এসব চললেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
সরেজমিনে জানা যায়, কাঁচিঘাটা রেঞ্জের তিনটি বিটের মধ্যে জাথিলা সবচেয়ে বড়। বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক কালিয়াকৈর রেঞ্জের কাশিমপুর বিট থেকে ২০২১ সালে জাথিলা বিটে যোগদান করেন। এরপর বনভূমি দখল বাড়তে থাকে।
এমদাদুল হককে সম্প্রতি কালিয়াকৈর চেকপোস্টে বদলির নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বদলির খবর পেয়েই তিনি বনের জমিতে আরও কিছু ঘর করার অনুমতি দিয়েছেন।
রক্ষক হিসেবে তার দায়িত্বের দুই বছরে ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে আলোকিত নিউজ। সেসবের কিছু চিত্র নিয়ে প্রথম পর্ব আজ।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের নাবিরবহর এলাকার ছৈলা মালির ছেলে মাছ ব্যবসায়ী দুলাল চলতি বছর হাফ ওয়াল ও রঙিন টিন দিয়ে বড় ঘর নির্মাণ করেছেন। আকাশমনি বাগান সংলগ্ন ঘরটির সামনের অংশ পাকা।
বনে নবনির্মিত দুলালের বাড়ি
নাবিরবহর উত্তরপাড়া এলাকার মেগা ফকিরের ছেলে নশের গত মাসে দুই রুমের টিনশেড বাড়ি করেছেন।
বাশাকৈর দক্ষিণপাড়া এলাকার সিরাজ উদ্দিনের ছেলে শাহাদাত ও বেতার কেদ্রের দক্ষিণ পাশে বাঁশিবাদক সানোয়ার হাফ ওয়াল দিয়ে করেছেন টিনশেড বাড়ি।
বেতার কেন্দ্রের উত্তর পাশে আবদুল জব্বারের ভাগিনা সাইদুল ও বিট অফিসের পূর্ব পাশে সাহেব আলীর ছেলে নজু মিয়া টিনশেড বাড়ি করেছেন।
লন্ডন বাজারের দক্ষিণে মহেরারচালা এলাকায় টিনশেড বাড়ি করেছেন জমির মেকারের মেয়ে জমুনা। বিটের অনুমতি ছাড়া কাজ করায় তার ঘর দুবার ভাঙা হয়েছিল।
জানপাড়া মাঠের দক্ষিণ পাশে সাজু ও কফুল এবং চাঁনখার বাড়ির পূর্ব পাশে বাঘাইর রাস্তায় জহুর আলীর ছেলে জিয়া টিনশেড বাড়ি করেছেন। এর মধ্যে সাজুর বাড়ি রঙিন টিনের।
স’মিল বাণিজ্য : বাশাকৈর এলাকার কেএনবি বাজারের উত্তর ও পূর্ব পাশে দুটি এবং লন্ডন বাজারে একটি স’মিল অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে। বাদল মিয়া, আবদুর রশিদ, ইয়ার উদ্দিন, ওমর আলী ও আবু তালেব মাস্টার গং মিল তিনটির মালিক।
সংরক্ষিত বন থেকে লন্ডন বাজারের স’মিলের দূরত্ব প্রায় ২০০ ফুট। আর বাকি দুটি বন থেকে প্রায় ৩০০ ফুট দূরত্বের মধ্যে চলছে।
আইন লঙ্ঘন ও বনের গাছ চেরাই করার দায়ে স’মিল তিনটি ২০২০ সালে উচ্ছেদ করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক মিলগুলো পর্যায়ক্রমে চালুর সুযোগ দেন।
লন্ডন বাজারে অবৈধ স’মিল
স’মিল তিনটি ২০২১ ও ২০২২ সাল থেকে পুরোদমে কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিট কর্মকর্তা মিল চালু বাবদ তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বনের জমিতে আগে ঘরপ্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা নেওয়া হত। বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক যোগদানের পর ঘুষের রেট বেড়েছে। এখন স্থাপনাভেদে ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা লেনদেন হয়। বেশির ভাগ স্থানে ঘর পুরনো দেখাতে ব্যবহার করা হচ্ছে আলকাতরা ও পুরনো টিন।
সূত্র আরও জানায়, মনোয়ারা নামের এক নারী বিট অফিসে দালালি করছেন। বিট কর্মকর্তা তার মাধ্যমে বিভিন্ন স্পট থেকে টাকা নিচ্ছেন। কর্মচারী তোফাজ্জল ও শাহজালালের দৌরাত্ম্যও বাড়ছে।
এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক আলোকিত নিউজের কাছে দাবি করেন, বনের জমিতে নতুন কোন ঘর নেই। কেউ কেউ হয়তো পুরনো ঘরের টিন পাল্টিয়েছেন।
স’মিল প্রসঙ্গে বলেন, মিলগুলো তাদের অজান্তে বসানো হয়েছে। আবার উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।