গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে দখল বাণিজ্যের তদন্তে এসিএফের কারসাজি
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে মূল্যবান বনভূমিতে কাউন্সিলরের পাঁচ তলা বাড়ির নির্মাণ কাজ এখনো বন্ধ হয়নি।
বিষয়টির ওপর আলোকিত নিউজ ডটকমে গত ২৭ আগস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর দুটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে ওঠে আসে জাতীয় উদ্যান রেঞ্জ কর্মকর্তা রেজাউল করিম ও বাউপাড়া বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবিরের গোপন সহযোগিতার তথ্য।
এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ৫ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সহকারী বন সংরক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ।
কিন্তু তিনিও কাজ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অভিযুক্তদের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সরেজমিনে জানা যায়, নগরীর ২২ নং ওয়ার্ডের বাংলাবাজার এলাকার সিএস ২৩০ নং দাগের ছয় শতাংশ জমিতে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। জমিটি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত।
স্থানীয় কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন কাজ তত্ত্বাবধান করছেন। একই দাগে তার ভাগিনা মোস্তফার চার তলা বাড়ির তৃতীয় ও চতুর্থ তলার কাজও সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে।
তাদের কারও যৌথ ডিমারকেশন নেই। ওই দাগের আরএস ৭৩৪ নং দাগ নিয়ে বন বিভাগের পক্ষে গাজীপুর দেওয়ানি আদালতে রেকর্ড সংশোধনীর মামলাও বিচারাধীন।
দখলীয় স্থাপনা দুটিতে জমির পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ। যার স্থানীয় বাজারমূল্য অন্তত ৩৫ লাখ টাকা।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, কাউন্সিলর তার দুই ভাগিনাকে গেজেটভুক্ত বনভূমি ওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে দিচ্ছেন। মোস্তফা আরও আগে প্রথমে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত করেন।
পরে ২০১৭ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ তলার কাজ শুরু করলে সাবেক বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম কাজ বন্ধ করে দেন। একজনকে আটক করে চালানও দেওয়া হয়।
চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি আজাদুল কবিরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ভবানীপুর বিটে চলে যান আরিফুল ইসলাম। কিছুদিন পর আবারও কাজ শুরু করেন মোস্তফা।
এই পর্যায়ে অভিযান পরিচালনা বা কোন মামলা করেননি আজাদুল কবির। তার নীরবতায় উভয় তলার কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।
এদিকে মোস্তফার বাড়ির দক্ষিণ পাশে আলোচিত পাঁচ তলা বাড়ির পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় আরিফুল ইসলামের আমলে। পরে বন বিভাগের তৎপরতায় তা বন্ধ থাকে।
আজাদুল কবির দায়িত্বে বসার পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অনুকূলে নেন কাউন্সিলর। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে পুনরায় কাজ শুরু হয়।
আলোকিত নিউজ বিষয়টি একাধিকবার জানালেও আজাদুল কবির কাজ বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি। এক পর্যায়ে কাউন্সিলরের ভাগিনা সহিদ হাজির বিরুদ্ধে পিওআর মামলা ও আদালতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন।
সময়সাপেক্ষ এই প্রক্রিয়ায় এখনো আদেশ পায়নি বিট অফিস। বিপরীতে বাড়িটির নিচ তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে বনভূমিতে কাউন্সিলরের ৫ তলার কাজ চলছে রাতে!
একজন বন কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের ঘটনায় পিওআর মামলা যথেষ্ট নয়। পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে হলেও উচ্ছেদ করা দরকার। তবে শুরু থেকেই প্রতিরোধ করলে জটিলতা তৈরি হত না।
তিনি আরও বলেন, ঘটনা শুনে বোঝা গেল, দখল প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলছে। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বনভূমি বেহাতের পেছনে আর্থিক লেনদেন থাকতে পারে।
অপরদিকে মোশারফ টাওয়ার সংলগ্ন পূর্ব পাশে কাউন্সিলরের মার্কেট দুটি। একটির নিচ তলার কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অপরটি টিনশেড।
ওয়ারিশ সূত্রে মাঝের অংশে হকার্স মার্কেট করেছেন সহিদ হাজি। মামা-ভাগিনার টিনশেড মার্কেট দুটিতে জমির পরিমাণ আনুমানিক আধা বিঘা।
একাধিক এলাকাবাসী জানান, টিনশেড মার্কেট দুটি ২৩০ নং দাগের বনভূমিতে গড়ে উঠেছে। ডিমারকেশন ছাড়া কাজ হওয়ায় অপরটির পুরো অংশ নিষ্কণ্টক না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া রওশন হাসপাতালের সামনে গেজেটভুক্ত বনভূমিতে নতুন তিনটিসহ কয়েকটি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন নজরুল ইসলাম। কাজ শুরুর দিকে জানালেও তা সম্পন্ন করার সুযোগ দেন আজাদুল কবির।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসিএফ শ্যামল কুমার কৌশলে অভিযুক্তদের রক্ষা করছেন। বাংলাবাজার রোডের রহমান ফিলিং স্টেশনের বন দখল ও ন্যাশনাল পার্কের গাছ পাচার নিয়ে আলোকিত নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তদন্তেও পক্ষপাত হয়েছে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে বন দখল করে ফিলিং স্টেশন!
গাছ পাচারের সময় আজাদুল কবির ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। অপর অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত পার্ক বিট কর্মকর্তা মাহমুদার রহমানও আছেন বহাল তবিয়তে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরের ন্যাশনাল পার্ক থেকে ‘গাছ পাচার’!
মদদ পেয়ে অভিযুক্তরা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। বনভূমি রক্ষায় আলোকিত নিউজের সহযোগিতাকে প্রতিপক্ষ ভেবে সম্পাদককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে এসিএফ শ্যামল কুমার ঘোষের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।