শ্রীপুরে ‘বনকে জোত দেখিয়ে’ নায়েব আলামিন ও ফজলুল হকের বাণিজ্য

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের শ্রীপুরে দুই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গেজেটভুক্ত বনভূমিকে জোত দেখিয়ে খাজনার রসিদ কাটার অভিযোগ উঠেছে।

তারা হলেন রাজাবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা এস এম আল-আমিন ও বরমী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ফজলুল হক মোড়ল।

আল-আমিনের বাড়ি রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ও ফজলুল হক মোড়লের বাড়ি কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ইউনিয়নের সোহাগপুরে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের নির্দেশনা অমান্য করে ঘুষের বিনিময়ে এ ধরনের সুযোগ দেওয়ায় বনভূমি জবর দখলের প্রবণতা বাড়ছে বলে অভিযোগ।

আল-আমিন সমাচার : ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আল-আমিন অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির। তিনি হালুকাইদ মৌজার আনছার আলীর কাছ থেকে সিএস ২০৯ নং দাগের গেজেটভুক্ত ৪০ শতাংশ বনভূমির ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ দুই হাজার ৪৫৩ টাকা আদায় করেছেন। যার রসিদ নং ০২৭৬৭৭।

এ ছাড়া গত বছরের ১১ নভেম্বর জয়নারায়ণপুর মৌজার কমর উদ্দিন গংয়ের নামে ১০৪/২০-২১ নং নামজারি ও জমাভাগ নথিমূলে ৭৯ শতাংশ জমির কর আদায় দেখানো হয় মাত্র ১০ টাকা। যার রসিদ নং ৫০৪৯৮৭।

অথচ ওই জোতের বাংলা ১৩৭৯ সন থেকে প্রায় ৫০ বছরের ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া ছিল। সুদসহ যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার ১২৮ টাকা।

গত ৬ জানুয়ারি উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো মতিয়ার রহমানের পরিদর্শনে এ ধরনের বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পড়ে। পরে কারণ দর্শানো নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা নাসরীন গত ২১ মার্চ আল-আমিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত আল-আমিন আলোকিত নিউজকে বলেন, আমার এই বিষয়ে কোন বক্তব্য নাই। সরকারি চাকরি করি তো, বক্তব্য দিতে পারব না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূমি কর্মকর্তা আল-আমিন দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত। তিনি কৌশলে সরকারের রাজস্ব তছরুপ করছেন। উপজেলা প্রশাসন প্রমাণ পাওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

এতে তার দাপট আরও বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মশিউর রহমান সময়ক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ।

তবে এডিসি মশিউর রহমান বলেছেন, আল-আমিনের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফজলুল হক সমাচার : ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ফজলুল হক মোড়ল আগে মাওনা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত ছিলেন। সেখানে নানা দুর্নীতি করেও ধরা পড়েননি।

তিনি ২০১৯ সালে রাথুরা মৌজার সিএস ৩২১৪ ও ৩২৭৭ নং দাগের গেজেটভুক্ত বনভূমিকে জোত দেখিয়ে খাজনার রসিদ কেটেছেন। এ ধরনের পাঁচটি রসিদের কপি আলোকিত নিউজের কাছে এসেছে।

তাতে দেখা যায়, হাছেন ও ওয়াদুদের নামে ৪৫ শতাংশের কর ১৯০ টাকা, গোলাপজান ও ওয়াদুদের নামে ১১ শতাংশের কর ২২ টাকা, আবদুল গফুর ও নূর হোসেনের নামে সাড়ে ২৭ শতাংশের কর ১৩৪ টাকা, গোলাপজান ও নূর হোসেনের নামে সাড়ে ১৭ শতাংশের কর ৫০১ টাকা এবং হাছেন ও ওয়াদুদের নামে আরও ১৪ শতাংশের কর ৫৭৮ টাকা আদায় করা হয়েছে।

ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, এভাবে কথিত কর দিয়ে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বনভূমি গ্রাস করা হচ্ছে। সাথে রয়েছে ব্যাংক ঋণসহ নানা সুবিধা। দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে দৌরাত্ম্য থামবে না।

এ ব্যাপারে ভূমি কর্মকর্তা ফজলুল হক মোড়লের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি আলোকিত নিউজকে বলেন, হয়তো ভুল করে রসিদ কেটেছি। নিউজ করার দরকার নেই।

আরও খবর