গাজীপুরে দখল বাণিজ্য : ফরেস্টার আরিফ ধরাছোঁয়ার বাইরে

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুর সদরের বাঘের বাজার ও এর আশপাশে বিঘাপ্রতি জমির বর্তমান বাজারমূল্য চার কোটি টাকা।

সেখানকার মাহনা ভবানীপুর মৌজার এসএ ৬৭৫ নং দাগের ১০০ বিঘা সরাসরি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত।

ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিট এলাকার ওই জমির অনেক অংশ ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও শিল্প প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছে।

কিন্তু দখলীয় বনভূমি উদ্ধার, পতিত ভূমি সংরক্ষণ ও বাগান সৃজনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে উদাসীনতা দেখাচ্ছে বিট অফিস।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম বাউপাড়া বিট থেকে গত বছরের জানুয়ারিতে ভবানীপুর বিটে বদলি হন। এরপর সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকনের আশীর্বাদে একই সাথে ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্বও পান।

চলতি বছরের জুনে তিনি চট্টগ্রামে বদলি হয়ে যান। এই সময়ের মধ্যে আলোচ্য দাগসহ বিভিন্ন স্থানে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য জমে ওঠে।

শিরিরচালা এলাকার মর্ডান ফিড মিলের পশ্চিম পাশে কয়েক বিঘা বনভূমি দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের শেষের দিকে। আরিফুল ইসলাম নিজে স্থানীয় রফিকুল ইসলাম মাস্টার গংকে সহযোগিতা করেন।

তার পরামর্শে রফিকুল মাস্টার গাজীপুর আদালত থেকে চার একর ৮০ শতাংশ জমিতে ১৪৪ ধারায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আদেশ আনেন। মোকদ্দমা নম্বর ২৬৪/১৯। পরে উল্টো নিজেরাই তা ভঙ্গ করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে রফিকুল মাস্টারের পাঁচটি দোকান ও পাঁচ রুমের বাড়ি, তাজউদ্দিন পরিবারের পাঁচটি দোকান ও একটি গোডাউন, তার মেয়ের জামাই মোমেনের দুটি দোকান, কাজলের পাঁচ রুমের বাড়ি এবং কাউসার মোল্লার কিন্ডার গার্টেনের নয়টি রুম।

রফিকুল মাস্টার আলোকিত নিউজকে বলেছেন, তিনি বিট কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামের পরামর্শে আদালত থেকে আদেশ এনেছেন। আরিফুল ইসলাম তাকে বলেছেন, আপনি এইভাবে যান। আমাদের লোকজন গিয়ে ডিস্টার্ব করার ক্ষমতা হবে না।

বিষয়টির ওপর গত ১১ আগস্ট আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তৎপর হয় বন বিভাগ। বর্তমান বিট কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন পরদিনই কাজ বন্ধ করে দেন।

এরপর ১৩ আগস্ট সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ভেঙে দেওয়া হয় কয়েকটি স্থাপনার কিছু অংশ।

এলাকাবাসী জানান, দখলদাররা গোপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কাউসার মোল্লা স্কুলের দেয়ালে প্লাস্টার করেছেন। ভাড়া দেওয়া দোকানগুলোর চালা ও শাটার লাগিয়ে চালু করা হয়েছে।

এভাবে স্থাপনাগুলো গড়ে ওঠার ফলে প্রায় দুই বিঘা বনভূমি বেহাত হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় আট কোটি টাকা।

বিট অফিস বলছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পিওআর মামলা দেওয়া হচ্ছে। আদালত থেকে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আনারও চেষ্টা চলছে।

ওয়াকিবহাল একজন বলেন, দখল প্রতিরোধে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। উচ্ছেদ না করে শুধু পিওআর মামলা দিলেই বনভূমি উদ্ধার হবে না।

রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানা আলোকিত নিউজকে বলেন, গত ২০ আগস্ট কাজ করার খবর পেয়ে এসিএফসহ তারা বাধা দিতে গেলে দখলদাররা হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশও ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে।

এদিকে যার যোগসাজশে বনভূমি দখল হল, প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলল নির্মাণ কাজ, সেই বিট কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম ও তার একাধিক সহযোগী এখনো রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আরিফুল ইসলাম দখল শুরুর পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জয়দেবপুর থানায় নামমাত্র একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরি নম্বর ৯৭৭। পুলিশ সেটার তদন্তে যায়নি। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানাননি।

একজন বন কর্মকর্তা বলেন, ১৪৪ ধারা অমান্যের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দীর্ঘ সময় নীরব থাকা ‘দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা’ নির্দেশ করে। জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি না হলে শৃঙ্খলা ফিরবে না।

অপরদিকে আরিফুল ইসলাম ভবানীপুর বিটে যোগদানের পর একই দাগের আনুমানিক ১০ শতাংশ জমিতে কামাল হোসেন বাড়ি নির্মাণ শুরু করেন। পরে তা ভেঙে দেওয়া হলেও কিছুদিন পর পুনরায় কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বন কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের ভবানীপুর বিটে ৮ কোটি টাকার বনভূমি দখল!

আরও খবর