গাজীপুরে খাস জমিতে ৩ তলা মার্কেট : জেলা প্রশাসন নীরব
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে ১০ কোটি টাকার খাস জমিতে মার্কেট নির্মাণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।
বিষয়টির ওপর গত ৩ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মার্চ আলোকিত নিউজ ডটকমে দুটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ঘটনাটি কৌশলে ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, নগরীর জাঙ্গালিয়াপাড়া এলাকার বাংলাবাজার রোডের উত্তর পাশে ১ নং খতিয়ানভুক্ত এসএ ৩০৪ ও আরএস ৬৫৩ নং পার্ট দাগে জমি ১৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারের জমি ৭৭ শতাংশ ও স্থানীয় আবদুল আজিজের নামে ৭০ শতাংশ।
আজিজ অনেক আগে থেকেই ৭৭ শতাংশের ভোগদখলীয় মালিক। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একাধিক বাড়ি ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল।
এ ছাড়া তিনি মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দিয়েছেন সোয়া ১১ শতাংশ। স্কুলের পাশে তার দানকৃত পাঁচ শতাংশে নির্মাণ করা হয়েছে জাঙ্গালিয়াপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক।
বাংলাবাজার রোড সংলগ্ন অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ জমির অর্ধেকেরও বেশি অংশে একটি পুকুর ছিল। গত বছর বালু ফেলে ভরাট করে তাতে হাজী আজিজ সুপার মার্কেট নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়।
তিন তলা ফাউন্ডেশন মার্কেটটির নিচ তলার কাজ সম্পন্নে তোড়জোড় চলছে। শতাধিক দোকান ভাড়া দেওয়ার লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের জামানত।
আজিজের একমাত্র ছেলে জাহাঙ্গীর আলম শহরের অন্যতম বড় গ্লাস ব্যবসায়ী। খাস জমি গ্রাসের উদ্দেশে বাবার নামে ডিমারকেশন করেছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এসএ শাখার ১৮১/২০১৮ নং সীমানা নির্ধারণ মামলা অনুযায়ী, বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনার ৭৭ শতাংশ জমি খাস হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর খালি ৭০ শতাংশ জমি দেখানো হয়েছে জোত হিসেবে।
অর্থাৎ ৭৭ শতাংশ জমি আগে থেকেই তাদের ভোগদখলে। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশে মার্কেট নির্মাণের ফলে পুরো সরকারি জমি বেহাত হয়ে গেল।
শিল্প কারখানা অধ্যুষিত ওই এলাকায় বিঘাপ্রতি জমির বর্তমান বাজারমূল্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। সে হিসাবে দখলীয় জমির মূল্য দাঁড়ায় ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, তঞ্চকতাপূর্ণ ডিমারকেশনটিতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। সন্দেহের অগ্রভাগে থাকা সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আবুল কালাম বর্তমানে এলএ শাখায় কর্মরত।
একাধিক ভূমি কর্মকর্তা বলেছেন, পার্ট দাগে ডিমারকেশনের সময় সরকারের স্বার্থে রাস্তা সংলগ্ন অংশ অগ্রাধিকার পায়। দখলীয় অংশকে খাস দেখিয়ে খালি অংশ দখলদারের হাতে তুলে দেওয়া গুরুতর অপরাধ।
এ ছাড়া খাস জমি ওয়াকফ বা দান করার এখতিয়ার কোন ব্যক্তির নেই। আগের ভোগদখলীয় অংশই জোত হিসেবে পরিগণিত হবে।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, সাবেক জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের আমলে ওই ডিমারকেশনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাই বর্তমান কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে এগোতে চাইছেন না।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে ‘প্রশাসনের যোগসাজশে’ ১০ কোটি টাকার খাস জমি আত্মসাৎ
গাজীপুরে ১০ কোটি টাকার খাস জমিতে মার্কেট নির্মাণ চলছেই