মুক্তারুজ্জামান মুক্তির কবিতা ‘পতিতা’

পতিতা

-মুক্তারুজ্জামান খাঁন মুক্তি

চারদিকে রুদ্র প্রহর তপ্ত ছনে বাঁধা ঘর
বিছানায় পড়ে আছে বৃদ্ধ বাবা-মা
রুজি-রোজগারে নেই তাড়া
দুয়ারে আজি অভাব খাড়া
সেইতো পতিহীন শূন্য ঘর
তারাহীন আমার জীবন।
আমি ব্যাকুল কর্মের সন্ধানে
এক মুঠো ভাত তুলে দিতে বাবা-মার মুখে
অভাবের কষাঘাতে দিগ্বিদিক ছুটে শেষে
আমার পাশে দাঁড়ায় অচেনা এক পুরুষ এসে।
স্বপ্ন দেখায় স্বপ্নগুলো রঙিন করে

চাকরি করে ঘরে দিব রঙিন বাতি
একদিন তুমি থাকবে ইটের গাঁথা দেয়াল ঘরে
বন্দি হলাম স্বপ্নগুলোর পিরামিডে।
সেই অচেনা পুরুষের হাত ধরে
গ্রাম হতে শহর দিকে
ছুটে চললাম চাকরির খুঁজে।
আমায় ছুড়ে দিল অন্ধকার বনে
শহরের সেই অজানা অলিগলি পথে।
অদ্ভুত সেই জগত
দেখে গা ছমছম করে
দেখা হয়নি কোন কালে
আমার বংশের কোন নারীর কপালে।
সেইতো…
আমি যখন ছোট ছিলাম
বাবা বলতো আদর করে
কন্যা তোকে বিয়ে দিব রাজপুত্র ধরে।
আজ আমার স্বপ্নগুলো মনে পড়ে
ভাবতাম আমি বিভোর হয়ে
বিয়ের পর বন্ধনে বেঁধে দেওয়া স্বপ্নের পুরুষ
আসবে আমার বাসর ঘরে
স্বপ্ন জালের ভালবাসা
আমি তাকে দিব উজাড় করে।

সেইতো স্বপ্ন…
স্বপ্নগুলো মিশে গেল নীল আকাশে
স্বপ্নগুলো ভেঙে লক্ষ মানুষের ভিড়ে
অচেনা শহরের অলিগলি পথে
উদ্ভুত এক নরকের মাঝে।
আমি বন্ধি হলাম স্বপ্নে দেখা
ইটের গাঁথা দেয়াল ঘরে।
কিছু ভুল…
আল্লাহর দেওয়া বিধান ভুলে
শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে
সেই অচেনা পুরুষের হাত ধরে
ধাপিত আমি জাহান্নামের পথে।
আমি তো ভুলে গিয়েছিলাম
রাবেয়া বসরীর কথা
সে হাজার কষ্ট বুকে নিয়ে
আল্লাহর বিধানে থেকে
যুদ্ধ করেছে দিনের পথে।
জাহান্নাম…
ইটের সেই চার দেয়ালের ঘরে
এক মধ্যবয়সী নারী এসে
বলল আমায় মিষ্টি হেসে
খাসা তুমি ফুটফুটে সুন্দর গোলাপ
তোমায় দেখে খদ্দের আসবে দিনে-রাতে
অবাক হয়ে চেয়ে।
আমি বললাম মধ্যবয়সী নারীর হাত ধরে
নারী হেসে বলে একটু পড়ে বুঝবি শেষে
এরপর চলে গেল মুচকি হেসে।
একটু পরে
একজন অচেনা সুদর্শন পুরুষ
আসল আমার ঘরে।
নির্বাক হলাম
অসহায়ের মাঝে শক্তিহীন হয়ে
পরাস্ত হলাম সেই পুরুষের কাছে।
আমার স্বপ্নের ভার্জিন খুলে গেল
অসৎ এই নরকের পথে
অচেনা পুরুষগুলো আসে-যায়
তৃপ্তি নেয় নারী দেহের।
ভোগ করে চলে যায়
সাধু বেশে তার নিজ ঘরে ফিরে
সমাজ তাকে ভাল জানে
নেই তার কোন দোষ!
আজ আমি…
নিষিদ্ধ ঘর হতে পারিনি ছুটে যেতে
সেই হতে আমি পতিতা।

আরও খবর