গাজীপুরে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ : গুলিবর্ষণের প্রথম সৈনিক কাজী আজিমউদ্দিন

আলোকিত প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পর বাঙালি জাতি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়।

আর একাত্তরের ১৯ মার্চ প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ হয় গাজীপুরের জয়দেবপুরে।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন নিয়ামত আলী, মনু খলিফা ও হুরমত আলী।

এর আগে সর্বদলীয় মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের দুটি উপ-কমিটি গঠিত হয়।

হাইকমান্ডে ছিলেন প্রয়াত সাংসদ মো. হাবিব উল্যাহ, ডা. মনীন্দ্রনাথ গোস্বামী ও এম এ মুত্তালিব।

অ্যাকশন কমিটিতে ছিলেন সংগ্রাম পরিষদের জয়দেবপুরের আহ্বায়ক আ ক ম মোজাম্মেল হক, নজরুল ইসলাম খান, নূরুল ইসলাম মাস্টার, মো. আয়েশ উদ্দিন, আবদুস সাত্তার মিয়া, মো. শহীদুল্লাহ বাচ্চু, শেখ আবুল হোসাইন, হারুন-অর-রশীদ ভূঁইয়া ও শহীদুল্লাহ পাঠান জিন্নাহ।

প্রতিরোধ যুদ্ধের পর মুক্তিকামী জনতার মুখে শ্লোগান ওঠে-জয়দেবপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।

যেভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধ : জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজবাড়িতে ছিল দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। হানাদার বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আবরার খানকে ঠেকানোর জন্য রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।

১৯ মার্চ দুপুরে জাহানজেব রাজবাড়িতে উপস্থিত হন। রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের সতর্ক অবস্থা দেখে তিনি অস্ত্র নেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন।

ততক্ষণে হাজারো জনতা জয়দেবপুর বাজার ও এর আশপাশে এসে জড়ো হন। সাথে যোগ দেন সমরাস্ত্র কারখানা, মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি ও ডিজেল প্লান্টের শ্রমিকরা।

তাদের হাতে ছিল দা, লাঠি ও বল্লম। প্রয়াত শিক্ষানুরাগী কাজী আজিমউদ্দিন, আবদুস সালাম ও সেকান্দার অবস্থান নেন ব্যক্তিগত বন্দুক নিয়ে।

বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় গাছপালা ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেন। মালবাহী ট্রেনের একটি বগি এনে রেলক্রসিংয়ে ব্যারিকেড দেওয়া হয়।

জাহানজেব এ খবর পেয়ে কর্নেল মাসুদকে ব্যারিকেড অপসারণের নির্দেশ দেন। কর্নেল মাসুদ মেজর মইনুলকে ঘটনাস্থলে পাঠান। মেজর মইনুল নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে কর্নেল মাসুদকে জানান, এত লোককে বুঝানো সম্ভব নয়।

পরে জাহানজেব সামনে বাঙালি সৈন্য ও পেছনে পাঞ্জাবি সৈন্য নিয়ে ঢাকা রওনা হন। রাস্তায় প্রবল ব্যারিকেড দেখে তিনি গুলিবর্ষণ করে তা অপসারণের নির্দেশ দেন। কিন্তু বাঙালি সৈন্যরা জনতার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করেন। তখন জনতা ব্যাপক ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।

এ সময় কাজী আজিমউদ্দিন তার বন্দুক দিয়ে গুলিবর্ষণ করেন। জনতার পক্ষে এটাই ছিল প্রথম গুলিবর্ষণের ঘটনা। এ ঘটনা দেখে পাক বাহিনী থমকে যায়।

কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকায় পাঞ্জাবিদের গুলিতে শহীদ হন নিয়ামত আলী ও মনু খলিফা। চান্দনা চৌরাস্তায় শহীদ হন হুরমত আলী ও কানুবীর।

আরও খবর