গাজীপুরে দেয়াল তুলে স্থাপনা, ১৬ কোটি টাকার বনভূমি হজম!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে চার বিঘা বনভূমি দখলের পর এবার হজম করে ফেলল রিলায়েন্স ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ।

ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিটের বাঘের বাজার এলাকায় প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটলেও বন বিভাগ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্লাস্টিকের বস্তা ও কার্টন পণ্য তৈরির কারখানা রিলায়েন্স ফাইবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজারের দক্ষিণ পাশে গত বিএনপি সরকারের আমলে গড়ে ওঠে। শ্বশুরবাড়ির সূত্রে এর মালিক কাজী শওকত জামান রুমেল।

কারখানাটি স্থাপনের বেশ আগে ঢাকার গুলশানের মৃত মনির আহমেদ স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে সাত বিঘা জমি কিনেন। এর মধ্যে পাঁচ বিঘা সিএস ৬৭৫ নং দাগের গেজেটভুক্ত বনভূমি। এই পাঁচ বিঘার মধ্যে রুপেন কেমিক্যাল এন্ড ফুটওয়্যারের নামে ৮০ শতাংশ ও তার নিজ নামে ৯০ শতাংশ রেজিস্ট্রি করা হয়।

পরে বড় পরিসরে কারখানার স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। গত পাঁচ-ছয় বছর আগে উত্তর পাশের বনভূমিতে নির্মাণ করা হয় একটি বড় গোডাউন।

সাইনবোর্ডবিহীন রিলায়েন্স ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজ

চলতি বছর পূর্ব পাশে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু হলে বিট অফিসের লোকজন গিয়ে বাধা দেন। বাধা না মানায় তিনবার কিছু কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়।

তখন বিট কর্মকর্তা শাহান শাহ আকন্দ আলোকিত নিউজকে বলেছিলেন, কারখানার ভেতরে বনের কোন জমি নেই। ডিমারকেশন না করায় কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

এরপর অনুসন্ধান করে কারখানার ভেতরে চার বিঘা বনভূমি থাকার তথ্য উদঘাটন করে আলোকিত নিউজ। এত বড় ঘটনা অতীত থেকে বিট অফিসের দখল তালিকায়ও চেপে যাওয়া হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ শেষ করে ভেতরে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। উত্তর পাশ দিয়ে করা হয়েছে আরেকটি বাউন্ডারি ওয়াল।

এলাকাবাসী জানান, নতুন বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের সময় বিট অফিস প্রথমে খুব তৎপর ছিল। পরে তাদের দাবি মিটিয়ে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা হয়।

ওই স্থানে বিঘাপ্রতি জমির বর্তমান বাজারমূল্য চার কোটি টাকা। সে হিসাবে দখলীয় জমির মূল্য দাঁড়ায় ১৬ কোটি টাকা।

তারা আরও জানান, ক্রয়কৃত অংশের মধ্যে কারখানার উত্তর ও পূর্ব পাশ দিয়ে বাইরে থাকা প্রায় এক বিঘা বনভূমিও দখলের পাঁয়তারা চলছে। কয়েক বছর আগে সেখানে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছিল।

একজন বন কর্মকর্তা বলেন, গেজেটভুক্ত দাগ পার্ট হলে অথবা জোতের সাথে বনভূমি থাকলে ডিমারকেশন করতে হয়। কিন্তু যেখানে দাগটি সম্পূর্ণ বনের, সেখানে দখলের সুযোগ দিয়ে ডিমারকেশনের আবেদন করানো পরিকল্পিত দুর্নীতির শামিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি কিভাবে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।

পূর্ব পাশে নবনির্মিত বাউন্ডারি ওয়াল

ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, ভবানীপুর বিটে বনভূমি দখল বেড়েছে। এসবে লেনদেন হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সাধারণত টাকা ছাড়া কেউ কিছু করলে অথবা ওপরের নির্দেশ পেলে অভিযান চালানো হয়।

এ ব্যাপারে কারখানার ম্যানেজার তারিকুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি আলোকিত নিউজের কাছে দাবি করেন, বাউন্ডারি ওয়াল নতুন নয়, দুই বছর আগে করা হয়েছে। কারখানার ভেতরে বনের কোন জমি নেই।

কারখানা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বন কর্মকর্তাদের পরামর্শে সীমানা নির্ধারণের জন্য গত ৯ জুন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দুটি আবেদন করা হয়েছে। এখন গেজেটভুক্ত দাগের আরএস খতিয়ান দেখিয়ে অথবা কাগজে-কলমে বনভূমি উদ্ধার দেখিয়ে ডিমারকেশন বাগিয়ে নেওয়ার তৎপরতা চলছে।

বিষয়টি নিয়ে পুনরায় ভবানীপুর বিট কর্মকর্তা শাহান শাহ আকন্দের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মোবাইলে কথা বলতে রাজি হননি।

আরও খবর