গাজীপুরে বনের গাছ কেটে রিসোর্টের রাস্তা, খুঁটি তুলে বনায়ন নিশ্চিহ্ন

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের জাতীয় উদ্যানের ৩ নম্বর গেটের পশ্চিম পাশে গড়ে উঠছে ইকো রিসোর্ট এন্ড রেস্টুরেন্ট।
প্রতিষ্ঠানটির চারপাশে সংরক্ষিত গজারি বন। মূল্যবান বনভূমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা।
এটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে হওয়ায় বন বিভাগের বড় কর্মকর্তাদের চলাচলে চোখে পড়ার কথা। কিন্তু তেমন কিছু হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বড় আয়তনের রিসোর্টটির চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল। ভেতরে কটেজ, রেস্টুরেন্ট ও সুইমিং পুলের নির্মাণ কাজ চলছে। বাউন্ডারি সংলগ্ন গজারি গাছ ঝুঁকিতে পড়ছে, মারা যাচ্ছে গাছপালা।

মহাসড়ক থেকে রিসোর্টে প্রবেশের একমাত্র রাস্তাটি বনভূমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে। মহাসড়ক অংশের পর এর দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট ও প্রস্থ ১০-১২ ফুট। এতে বেহাত হয়েছে পৌনে এক শতাংশ বনভূমি।
এই রাস্তা তৈরি ও ব্যবহারের ফলে বনভূমিতেও প্রভাব পড়ছে। গাছের বৃদ্ধি ও নতুন উদ্ভিদ জন্মানোর স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্মাণাধীন রিসোর্টটির মালিক ঢাকার গুলশানের স্বর্ণের ব্যবসায়ী নজির আহম্মদ। নিজস্ব বা বিকল্প কোন রাস্তা না থাকলেও তিনি সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকনের সহযোগিতায় ডিমারকেশন বাগিয়ে নেন।
তখন ডিএফওর নির্দেশে ‘বনের কোন ধরনের ক্ষতি হবে না’ মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন বাউপাড়া বিটের সাবেক বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম। এরপর তাদের আমলেই গাছ কেটে বনের ওপর দিয়ে রাস্তাটি করা হয়।
২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে জহির উদ্দিন আকন বদলি হলে চলতি দায়িত্ব পান জাহিদুর রহমান মিয়া। ঘটনাটি চোখে পড়লে তিনি উপস্থিত থেকে খুঁটি পুঁতে ও বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপণ করে রাস্তা বন্ধ করে দেন।
১৩ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক আইডিতে জবর দখল সংক্রান্ত কয়েকটি ছবি পোস্ট করে জাহিদুর রহমান লিখেন, আমাদের অঙ্গীকার ‘বনের এক ইঞ্চি জমিও ছাড় নয়’।

কিন্তু তার সে প্রচেষ্টা আর টেকেনি। দায়িত্ব হস্তান্তরের পর খুঁটি তুলে ফেলা হয়। নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয় সৃজিত বনায়ন।
এ ঘটনায় সাবেক বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবির কোন ব্যবস্থা নেননি। তিনি টাকার বিনিময়ে নীরব ভূমিকা পালন করেন বলে অভিযোগ।
এ ব্যাপারে রিসোর্টে গেলে এক প্রকৌশলী একজনকে ফোন ধরিয়ে দেন। তিনি নিজেকে ম্যানেজার সাইফুল পরিচয় দিয়ে এক টিভি সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে বলেন।
বর্তমান বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন আলোকিত নিউজকে বলেন, শুনেছি রিসোর্টের মালিক ডিমারকেশন করে কাজ করছেন। আমি কাগজপত্র পাইনি।
সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, ইকো রিসোর্টের পাশে চার তলা শালবন রেস্টুরেন্টও জহির উদ্দিন আকনের আমলে গড়ে উঠেছে। তাদের রাস্তাও বনভূমি দখল করে তৈরি করা হয়েছে।
লুৎফরের বাংলোবাড়ি : মাস্টারবাড়ি বাজারের দক্ষিণ দিকে বাউপাড়া বিটের নার্সারি। এর বিপরীত দিকে বাংলোবাড়ি নির্মাণ করছেন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লুৎফর রহমান।
বাংলোটিতে বনভূমি ব্যতীত প্রবেশের রাস্তা নেই। মালিক কয়েক বছর আগে বনভূমির ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তখন বিট অফিস কাজ বন্ধ করে দেয়।
সম্প্রতি লুৎফর রহমান বনভূমি সংলগ্ন পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে আরসিসি বাউন্ডারি ওয়ালের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। বাংলোর বিদ্যুতের লাইনও বনের ওপর দিয়ে নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিতে ঘটনাস্থলে গেলে কেয়ারটেকার মালিকের সাথে কথা বলে আলোকিত নিউজের প্রতিবেদককে ফোন ধরিয়ে দেন। তখন মালিক অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
পরে লুৎফর রহমান আলোকিত নিউজের সম্পাদককে ফোন করে বলেন, আমি এ দেশের বিটিভির সাংবাদিক ছিলাম। আমি এ দেশের বহু পত্রিকার সাংবাদিক। আমার চার-পাঁচটা পোর্টাল আছে।
তিনি বলেন, আমি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল প্রেসক্লাবের মেম্বার। আমি অস্ট্রেলিয়ার দুই-তিনটা রেডিওর প্রডিউসার। এ দেশের টপ টপ সাংবাদিক আমার পরিচিত। আপনি কোন ভিত্তিতে তথ্য নিতে আসলেন?
অভিযোগের জবাবে লুৎফর রহমান দাবি করেন, তার ডিমারকেশন করা আছে। বাংলোতে প্রবেশের রাস্তার জায়গা জোতের। বন বিভাগ যাচাই-বাছাই করেছে।
এলাকাবাসী বলছেন, রাস্তা না থাকলে যেখানে সাধারণ ডিমারকেশন পাওয়া কঠিন, সেখানে বাংলোর মত স্থাপনা অনুমতি পেল কীভাবে? সুষ্ঠুভাবে মাপজোখ করা উচিত।