গাজীপুরের মর্দপাড়ায় বনের গাছ কেটে রাস্তা, ডিমারকেশন ছাড়াই বাড়িঘর!
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের মর্দপাড়ায় সংরক্ষিত বনের ক্ষতি করে ও ডিমারকেশন ছাড়াই বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিটের গজারিয়াপাড়া এলাকার এই মহল্লাটিতে দীর্ঘদিন ধরে এসব কর্মকাণ্ড চলে আসছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রীন কোল্ড স্টোরেজের পূর্ব পাশে গজারি বন ঘেঁষে একটি ফাউন্ডেশন বাড়ির নিচ তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সাথে আরেকটি ফাউন্ডেশন বাড়ির কাজ চলছে।
বাড়ি দুটিতে বন ব্যতীত প্রবেশের কোন রাস্তা নেই। নির্মাণ সামগ্রীও বনের ভেতরে রাখা হচ্ছে।
এর ফলে নতুন গাছ জন্মানোর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ঝুঁকিতে পড়েছে গাছপালা।
সেখানকার বাসিন্দারা জানান, প্রথম বাড়িটি কাপাসিয়ার একজন জমি কিনে করেছেন। তারা মালিকদের নাম জানেন না।
বিট অফিস সূত্র জানায়, বাড়ি দুটি যৌথ ডিমারকেশন ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তা না থাকলেও কিছুদিন আগে পার্ক বিটে বদলি হওয়া বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবির কাজের অনুমতি দিয়েছেন।
আর্থিক লেনদেনের প্রশ্নে সূত্রের ভাষ্য, ডিমারকেশন না থাকলে যেখানে টিনশেড দোকান করলেও বাধা দেওয়া হয়, সেখানে মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়া ফাউন্ডেশন বাড়ি কীভাবে সম্ভব?
এদিকে মর্দপাড়া মসজিদের উত্তর পাশে সম্প্রতি তিন তলা ফাউন্ডেশন বাড়ির কাজ শুরু করেছেন রফিক। গজারি বনের ভেতরে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী।
তারও ডিমারকেশন নেই। সেপটিক ট্যাংকির কিছু অংশ বনের মধ্যে পড়েছে। মাটি ফেলে আরও কিছু অংশ দখল করা হয়েছে।
শাহিদুল বড় পরিসরে একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। ডিমারকেশন না থাকা ও বনের ক্ষতি হওয়ায় গত বছর বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবির কাজ বন্ধ করে দেন।
একই সাথে ভেঙে দেওয়া হয় বন ঘেঁষে নির্মিত বারান্দার দেয়াল। পরে ম্যানেজ করে ভেঙে দেওয়া অংশ সম্পন্ন করা হয়। এখন আরও রুমের কাজ চলছে।
স্থানীয়রা জানান, বাড়িগুলোতে ইট ও বালুসহ অন্যান্য সামগ্রী পরিবহনের জন্য বনের ভেতর দিয়ে একাধিক রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ট্রাকের চোটে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শাহিদুলের বাড়ির সামনে গোড়া থেকে ভেঙে পড়া একটি গজারি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। বিট অফিস টাকা না পেলে মাঝে-মধ্যে রাস্তায় খুঁটি পুঁতে। পরে আবার উঠিয়ে ফেলা হয়।
শাহিদুল আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি বনের পাশের অংশ আগেই করেছি। এখন ভেতরে কাজ করছি। বনের ক্ষতি হচ্ছে না।
অপরদিকে টয়েজ ফ্যাক্টরির পাশে বন ঘেঁষে একটি অগভীর পুকুর প্লট আকারে বিক্রি করা হয়েছে। চারজন ক্রেতা ডিমারকেশন ছাড়াই পুকুরটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গত ১৫ এপ্রিল রাতে ট্রাকযোগে ভিটি বালু এনে ভরাট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আগে নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য পশ্চিম পাশের গজারি বনের ভেতর দিয়ে একাধিক গাছ কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়।
জানতে চাইলে ক্রেতাদের একজন ইউসুফ আলোকিত নিউজকে বলেন, তিনি ও তার এক আত্মীয় পাঁচ কাঠা করে জমি কিনেছেন। বিট অফিস একবার বাধা দিয়েছিল। পরে আর সমস্যা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, এভাবে নির্মিত স্থাপনাগুলোকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। ওই ভরাট বাবদ ৫০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে।
বিট অফিসের পক্ষে বনপ্রহরী রনি টাকা বুঝে নিচ্ছেন। তার দাপটও চোখে পড়ার মত।
এ ব্যাপারে রনি আলোকিত নিউজকে বলেন, এই কাজগুলো আগের বিট অফিসার আজাদুল কবির ও বনপ্রহরী ফয়সালের সময় থেকে চলে আসছে। তারা রাতের বেলা কাজ করে। দিনের বেলায় আমরা বাধা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করি।
বিষয়টি নিয়ে বর্তমান বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।