কাপাসিয়ার টোক ভূমি অফিসে ‘ঘুষখোর’ খবীর মোল্লা বেপরোয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, কাপাসিয়া : গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ঘুষ-দুর্নীতি এখন ওপেন সিক্রেট।
ভূমি সহকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কর্মকর্তা খবীর উদ্দিন মোল্লা ওরফে নান্নুর চাহিদা মেটাতে গিয়ে জনসাধারণকে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
আলোকিত নিউজের অনুসন্ধানে ভূমি অফিসের সেবার বিপরীতে বাণিজ্যের এসব তথ্য বেরিয়ে আসছে।
টোক ভূমি অফিস থেকে টোক, সিংহশ্রী ও রায়েদ ইউনিয়নের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়। এর মধ্যে সিংহশ্রীতে কোন অফিস নেই।
টোকনগর গ্রামের আবদুল হামিদ জানান, গত ২৩ আগস্ট তাদের জমির খাজনা কাটতে গেলে ১৫০০ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু রসিদ দেওয়া হয় ১৪৫ টাকার।
সুলতানপুর গ্রামের মজিদা জানান, তার ১১ শতাংশ জমির খাজনা নেওয়া হয়েছে ১৫০০ টাকা। রসিদ পেয়েছেন ১৪৫ টাকার।
সালোয়ারটেকি গ্রামের জামাল উদ্দিন জানান, তার ভায়রা মামুনের খাজনা কাটায় নেওয়া হয়েছে সাড়ে তিন হাজার টাকা। রসিদ দেওয়া হয়েছে ৫০০ টাকার।
তিনি আরও জানান, আলমগীরের কাছ থেকে আধা বিঘা জমি কেনার সময় খাজনার রসিদ কাটতে গেলে খবীর মোল্লা ১৪ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে এক নেতার মাধ্যমে ১২ হাজার টাকা দিলে অল্প টাকার রসিদ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া তার বড় ভাই হেলালের তিন শতাংশ জমির খাজনা নেওয়া হয়েছে আড়াই হাজার টাকা। রসিদ দেওয়া হয়েছে ৩০০ টাকার।
ডুমদিয়া গ্রামের শিক্ষক মঞ্জুরুল হক গাজী বলেন, খাজনা দিতে গেলে নায়েব আমার কাছে প্রথমে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে দুই হাজার টাকা নিয়ে রসিদ দিয়েছেন। মনে হচ্ছে ফলস চেক দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আলোকিত নিউজের হাতে দুটি ভিডিও এসেছে। তাতে ঘুষ লেনদেন ও খবীর উদ্দিন মোল্লার কথোপকথন রয়েছে।
একটিতে টোকনগর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ২৪ শতাংশ জমির খারিজ বাবদ ৪২ হাজার টাকা দাবি করেন। বলতে শোনা যায়, এক হাজার টাকা দিয়ে গেছে। আরও ৪১ হাজার টাকা দেন। নয়তোবা সবাই মিলে আসেন।
অপরটিতে দেখা যায়, খবীর মোল্লা সুলতানপুরের একটি খারিজ বাবদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে শার্টের পকেটে রাখেন। পুরো ১০ হাজার টাকা আছে কি না, গুনে দেখতে বললে তিনি বলেন, না থাক। তোর ভাবি গুনবোনে।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, খবীর মোল্লা অফিস চলাকালীন সময়ে নিজ চেয়ারে বসে সিগারেট টানছেন। সামনে দুই চেয়ারে বসে আছে দুই দালাল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খবীর উদ্দিন মোল্লার মূল পোস্টিং উপজেলার কড়িহাতা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) নীলিমা রায়হানা তাকে টোক ভূমি অফিসে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেন।
এরপর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সরকার নির্ধারিত ফি-কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জমির খাজনা-খারিজে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
খবীর উদ্দিন মোল্লার পৈতৃক বাড়িও চাঁদপুর ইউনিয়নের তিলশুনিয়া গ্রামে। নিজ উপজেলায় লোভনীয় পোস্টিং পেয়ে তার দাপটও চোখে পড়ার মত।
অফিসটিতে কয়েকজন দালাল কাম ওমেদার রয়েছে। তাদের মধ্যে সুলতানপুরের মাসুদ ও হাইলজোরের নয়ন দাস কর্মচারীর মত চেয়ার-টেবিলে বসে ফাইলপত্র নিয়ে কাজ করেন।
মাসুদ আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে কাজ করছি। মোবাইলে এসব কথা বলা যাবে না।
নয়ন বলেন, মানুষ কাজ দেয় আর আমি জমি সংক্রান্ত কাজ বুঝি। নায়েবও আমাদের দিয়ে করায়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত খবীর উদ্দিন মোল্লা দালালদের উপস্থিতি স্বীকার করলেও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বিষয়টির ওপর গত ২৬ আগস্ট আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে চলে ব্যাপক তোলপাড়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
তবে প্রতিবেদন দেখে খবীর উদ্দিন মোল্লাকে ডেকে কথা বলেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর ফরহাদ শামীম।
তিনি আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। মৌখিকভাবে তাকে ডেকে সতর্ক করেছি।
এসিল্যান্ড বলেন, খবীর উদ্দিন মোল্লা তাকে বলেছেন, স্থানীয় কিছু লোক, যাদের অবৈধ স্বার্থহানি হচ্ছে, তারা হয়তো নিউজ-টিউজ করাচ্ছে।
আপনারা লিখিত অভিযোগ ছাড়া তদন্ত করতে পারবেন না-এমন কোন বাইন্ডিংস আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যদি কাজ করতে যাই, সে ক্ষেত্রে তো একটি লিখিত অভিযোগ লাগবে। কেউ অভিযোগ করলে পদক্ষেপ হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, লিখিত অভিযোগ ছাড়া তদন্ত বা ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না-এমন নির্দেশনা কোথাও নেই। মিডিয়ার নিউজ বা অন্যভাবে তথ্য পেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কর্তব্য।
আরও পড়ুন : কাপাসিয়ার টোক ভূমি অফিসে খবীর মোল্লার ঘুষ বাণিজ্য