গাজীপুরে বন দখল ও বিনাশ : বারবার বেঁচে যাচ্ছে মাদবর এগ্রো
আলোকিত প্রতিবেদক : সংরক্ষিত বনভূমি দখল ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতিসাধন করেছে একাধিকবার। তারপরও কোন মামলার মুখোমুখি হতে হয়নি।
বারবার বেঁচে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটি হল মৎস্য ও প্রাণিখাদ্য উৎপাদনকারী মাদবর এগ্রো। কারখানাটি গাজীপুরের ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিটের নলজানী এলাকায় গড়ে উঠেছে।
সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যমতে, মাদবর এগ্রোর মালিক আওলাদ হোসেন মাদবর কৌশলে আরএস ১৮০০ নং দাগের বনভূমি দখল করছেন। গত বছর উত্তর পাশে ছয় তলা ভবন নির্মাণের সময় মাটি ফেলে প্রায় আধা বিঘা বনভূমি দখল করা হয়।
পরে তখনকার বিট কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন তাতে বাধা দিয়ে আকাশমনি চারা রোপণ করেন ও বাঁশ দিয়ে বেড়া দেন। কিছুদিন পর চারাগুলো বিনষ্ট করে ফেলা হয়।
গত বছরের শেষ দিকে উত্তর পাশের বনভূমির ওপর দিয়েই ১২টি আকাশমনি ও একটি মেহগনি গাছের ডালপালা কেটে সাতটি খুঁটির নতুন বিদ্যুৎ লাইন টানা হয়েছে। গত এপ্রিলে কাটা হয়েছে আরও ডালপালা। ফলে উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বনায়ন হুমকির মুখে পড়েছে।
গত মার্চের শেষ দিকে মালিক পূর্ব পাশের এক বিঘা বনভূমি দখল করে ভেকু দিয়ে মাটি ভরাট শুরু করেন। পাশাপাশি বিনষ্টকৃত বাগানের অংশও পুনরায় লোহার অ্যাঙ্গেল ও টিনের বেড়া দিয়ে দখলে নেওয়া হয়।
এ ছাড়া নবনির্মিত ভবনের পূর্ব পাশে দুটি বড় আকাশমনি গাছ কেটে করা হয় মিনি সিকিউরিটি রুম। গেটের পশ্চিম পাশে বনভূমি দখল করে করা হয় মালবাহী গাড়ির স্ট্যান্ড।
বিষয়টির ওপর গত ২ এপ্রিল আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে চলে তোলপাড়। পরদিন রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানা ও বিট কর্মকর্তা শাহান শাহ আকন্দ স্টাফ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।
এ সময় লোহার অ্যাঙ্গেল ও টিনের বেড়া অপসারণ করা হয়। গাড়ির স্ট্যান্ডে বাঁশের বেড়া দিয়ে রোপণ করা হয় কিছু চারা। তবে চারা নষ্ট করে আবারও স্ট্যান্ড করা হয়েছে।
একই সাথে মাটি ভরাটের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে কারখানার কর্মকর্তারা দ্রুত বিপুল পরিমাণ মাটি অপসারণ করেন।
কিন্তু মিনি সিকিউরিটি রুম উচ্ছেদ করা হয়নি। মালিক কর্তৃক স্থাপিত ‘এফডি’ লেখা কয়েকটি খুঁটিও বহাল রয়েছে।
বারবার দখল হলেও বিনষ্টকৃত বাগানের অংশে আর বনায়ন করা হচ্ছে না। সুযোগ পেয়ে মালিক একাংশ বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করছেন। আরেক অংশ কারখানার ময়লা পানির ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে।
এদিকে কারখানার পূর্ব পাশে সরকারি খাল ঘেঁষে অন্তত সাত শতাংশ বনভূমি দখল করে উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। সেটি উচ্ছেদেও কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারখানার মালিককে একাধিক বন কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সহযোগিতা করছেন। তাই বনভূমি দখল, দখলের চেষ্টা, গাছপালা কর্তন, বনের আকৃতি-প্রকৃতি নষ্ট এবং পরিবেশ-প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হলেও অদ্যাবধি কোন মামলা করা হয়নি।
উল্টো পার্ট দাগে ২০১৯ সালে উপযুক্ত হিসেবে বুঝে নেওয়া আড়াই বিঘা বনভূমি মাদবর এগ্রোর হাতে তুলে দিতে ডিমারকেশনের নামে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এমনকি বন ও পরিবেশের কোন ধরনের ক্ষতি বা ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে অনাপত্তিপত্রও দেওয়া হচ্ছে।
অথচ বন আইনে স্পষ্টভাবে নির্দেশনা রয়েছে, কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে মালিক পক্ষ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টদের মামলায় আসামি করতে হবে।
এ ব্যাপারে ভবানীপুর বিট কর্মকর্তা শাহান শাহ আকন্দ আলোকিত নিউজকে বলেন, আমার সময়ে মাদবর এগ্রোর বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। আমি আর বেশি কিছু জানি না।
জানতে চাইলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজল তালুকদার আলোকিত নিউজকে বলেন, মাদবরের ডিমারকেশনের এখনো কোন সমাধান হয়নি। আমাদের জায়গা আমরা দিব না।
বিদ্যুৎ লাইন, বাগান নষ্ট ও বারবার দখলের চেষ্টা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ লাইন আমাদের জায়গায় না, আমি দেখেছি। দখলের চেষ্টা করে, আমরা আমাদের মত আইনি প্রক্রিয়া নিচ্ছি।
মামলা না হওয়া প্রসঙ্গে ডিএফও বলেন, মামলা হয়েছে। ওইটা আমাদের অবজারভেশনে আছে।
উল্লেখ্য, মাদবর এগ্রোর ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বনভূমির ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন টানা ও গাছপালা কাটার কথা আলোকিত নিউজের কাছে স্বীকার করেছেন। যা গত ২০ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে মাদবর এগ্রোর মুখে ‘দেড় বিঘা বনভূমি’ তুলে দিল বন বিভাগ!