গাজীপুরে বন-সিএণ্ডবি ও খাস জমি গ্রাস করছে হামজা গ্রুপ
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে মূল্যবান বনভূমিসহ সরকারি জমি অবাধে গ্রাস করছে হামজা গ্রুপ।
জেলা সদরের ভবানীপুর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে রাত-দিন চলছে এ দখলবাজি।
এ ঘটনায় ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিট অফিস, জেলা সড়ক ও জনপথ এবং ভূমি অফিস কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের পশ্চিম পাশে পৌনে দুই একর নিচু জমি বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। চারপাশে নির্মাণ করা হচ্ছে সীমানা প্রাচীর।
এর মধ্যে পূর্ব পাশে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অন্তত ১০ ফুট জমি সীমানা প্রাচীরের ভেতরে পড়েছে। উঠিয়ে ফেলা হয়েছে সওজের খুঁটি।
প্রস্তাবিত এই পোশাক কারখানার সামনের অংশেও সওজের এক বিঘা জমি দখল করে ভরাট করা হয়েছে। মহাসড়ক থেকে এর দৈর্ঘ্য আনুমানিক ১৫০ ফুট ও প্রস্থ ১০০ ফুট।
সওজের ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৪ অনুযায়ী, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যাতায়াতের প্রবেশ পথের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সর্বোচ্চ ২৪ ফুট পর্যন্ত জমি লিজ পেতে পারে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ডিএকেএম নাহীন রেজা আলোকিত নিউজকে বলেন, তারা আদৌ লিজ নিয়েছে কি না, সেটাও বিষয়। আমি আমার অফিসারকে বলছি।
এ ছাড়া উত্তর পাশে ৮২৬ নং দাগের গেজেটভুক্ত বনভূমি দখল করা হচ্ছে। সেখানে খনন করা হয়েছে নালা। সরানো হয়েছে বন বিভাগের খুঁটি।
তাদের অপরিকল্পিত ভরাটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানি প্রবাহ। এখন বিভিন্ন কারখানার পানি ওই নালা দিয়ে যাচ্ছে। সওজের নকশা অনুযায়ী নিজস্ব জমিতে ড্রেন নির্মাণ না করায় বর্ষায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভবানীপুর বিট কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আলোকিত নিউজকে বলেন, মালিক পক্ষকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। একটি মটরও জব্দ করা হয়েছে।
তিনি স্বীকার করেন, মাপজোখ হলেও ডিমারকেশন অনুমোদনের আগেই নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে মহাসড়কের পূর্ব পাশ দিয়ে দক্ষিণে হামজা কেমিক্যাল। ফাউন্ডেশন দিয়ে বড় পরিসরে কারখানাটির সম্প্রসারিত অংশের কাজ চলছে।
কারখানার দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে রেকর্ডের রাস্তা। রাস্তাটির প্রস্থ ২৮-৩০ ফুট। পূর্ব পাশের অংশ মাটি ফেলে দখল করা হয়েছে। নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, হামজা কেমিক্যাল রেকর্ডের রাস্তা দখল করায় ২ নং খতিয়ানভুক্ত আধা বিঘারও বেশি খাস জমি বেহাত হয়েছে।
বিষয়টি মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা লুৎফর রহমানকে জানালে তিনি সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরে লুৎফর রহমান আলোকিত নিউজকে বলেন, ডিমারকেশনে কীভাবে মাপ হল, দেখতে হবে। আমি এসিল্যাণ্ড অফিসে প্রতিবেদন দিব।
জানতে চাইলে হামজা গ্রুপের মালিক আবুল কাশেম আলোকিত নিউজকে বলেন, সওজের ২৬ বা ২৭ শতাংশ জমি আমাদের ১০ বছরের লিজ ছিল। এখন নবায়নের জন্য আবেদন দিয়েছি।
লিজের শর্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শর্ত ছিল আমরা কারখানার জন্য সংযোগ সড়ক ও বাগান করব।
বাগান না করায় লিজের শর্ত ভঙ্গ হওয়া এবং সংযোগ সড়কের জন্য এক বিঘা জমি নেওয়ার নিয়ম না থাকার বিষয়টি জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনি পারলে নিউজ করে কাজ বন্ধ করে দেন।
রেকর্ডের রাস্তা দখল প্রসঙ্গে আবুল কাশেম বলেন, আপনি ডিসি অফিসে গিয়ে দেখেন। আমার বক্তব্য আপনার শোনার দরকার নেই।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক সাইফুল ইসলাম ও প্রতিবেদক মেহেদী হাসান সবুজ)