গাজীপুরে ‘৪ বিঘা বনভূমিতে’ গড়ে উঠছে প্যারামাউন্টের ৬ তলা!
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে চার বিঘা বনভূমি দখল করে ছয় তলা কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে।
ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিটের বানিয়ারচালা এলাকায় গত চার মাস ধরে চলছে এ দখলযজ্ঞ।
সরেজমিনে দেখা যায়, এমসি কারখানার উত্তর পাশে সদ্য নির্মিত প্যারামাউন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেডের বাউন্ডারি ওয়াল। ভেতরে চলছে কারখানার নির্মাণ কাজ।
চারদিকে আরসিসি ওয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে চার বিঘা জমি। পুরো জমি মাহনা ভবানীপুর মৌজার সিএস ৪১৪ নং দাগের গেজেটভুক্ত বনভূমি।
ওই এলাকায় বর্তমানে বিঘাপ্রতি জমির বাজারমূল্য দুই কোটি টাকা। সে হিসাবে শুধু দখলীয় জমির মূল্য দাঁড়ায় আট কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই জমিতে অর্ধশতাধিক আম, কাঁঠাল ও তালগাছ ছিল। এসপি গ্রুপের প্যারামাউন্ট অ্যাপারেলস ২০১২ সালে স্থানীয় আবদুল কাদির গংয়ের কাছ থেকে গাছপালাসহ জমি কিনে নেয়।
গত বছরের অক্টোবরে গাছ কেটে বাউন্ডারি ওয়ালের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন বিট অফিস কাজ বন্ধ রাখতে একটি নোটিশ দেয়।
পরে প্যারামাউন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার সাহা গত ১৫ ডিসেম্বর নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেন। রিট নং ১২৫৩৩/২১।
এর প্রেক্ষিতে আদালত নোটিশের কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। একই সাথে রুল জারি করে এক মাসের মধ্যে জবাব দিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এবং বিট কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
এরপর মালিক বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ সম্পন্ন করেন। এখন ছয় তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে কারখানা নির্মাণ করছেন।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২৫ অক্টোবর বিট অফিস কর্তৃক দেওয়া ২২৮/ভবি-১৫ নম্বর স্মারকের নোটিশে বেড়া দিয়ে বাউন্ডারি স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। অথচ সেখানে বেড়া নয়, পাকা বাউন্ডারি ওয়ালের কার্যক্রম চলছিল।
এই নোটিশ দাখিল করেই মালিক স্থগিতাদেশ এনেছেন। আদালতের আদেশে অস্থায়ী বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে বাধা না দিতে বলা হয়েছে। ভবন নির্মাণের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
কিন্তু মালিক সেখানে ১০-১৫ ফুট উচ্চতার স্থায়ী বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করেছেন। একই সাথে কারখানার নির্মাণ কাজও দ্রুতগতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির এমডি উত্তম কুমার সাহার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি আলোকিত নিউজকে বলেন, আমাদের নামে সিএস ও আরএস আছে। হাইকোর্ট সম্পূর্ণ কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন।
কী করছে বন বিভাগ : চার মাস ধরে প্যারামাউন্ট অ্যাপারেলসের দখলীয় কর্মকাণ্ড চলছে। তবে সরকারি সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগের জোরালো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে বিট কর্মকর্তা শাহান শাহ আকন্দ আলোকিত নিউজকে বলেন, আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় আমরা বাধা দিতে পারছি না। তবে দুটি মামলা দিয়েছি।
রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানা আলোকিত নিউজকে বলেন, রুলের জবাব দেওয়া হয়েছে। কোর্টের বিষয় আমাদের সলিসিটর দেখেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা গত ২২ ফেব্রুয়ারি জয়দেবপুর থানায় জিডি করেছি। গাজীপুরের দেওয়ানি আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজল তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।
এদিকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিট অফিসের দায়েরকৃত দুটি পিওআর মামলায় শুধু কয়েকজন ইট ও বালু সরবরাহকারী এবং কর্মচারীকে আসামি করা হয়েছে। কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে মালিককে আসামি করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তা প্রতিপালন করা হয়নি।
একজন বন কর্মকর্তা বলেন, বনভূমি দখল বা স্থাপনা নির্মাণ অবস্থায় প্রতিরোধ বা উচ্ছেদ করতে হয়। প্যারামাউন্টের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা না নিয়ে নোটিশ দেওয়া ও নোটিশে পাকা বাউন্ডারি ওয়ালের তথ্য গোপন করা রহস্যজনক।
গাজীপুর জজকোর্টের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম মোল্লাহ আলোকিত নিউজকে বলেন, বর্ণিত বিষয়ে যেহেতু রাষ্ট্রের বৃহৎ স্বার্থ জড়িত, সেহেতু দ্রুততম সময়ে আদালতের কাছে প্রকৃত অবস্থা উপস্থাপন করে স্থগিতাদেশ বাতিলের আবেদন করা উচিত ছিল। কিন্তু কৌশলে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।