গাজীপুরে বনভূমিতে রিলায়েন্সের স্থাপনা বহাল, মামলা দিয়েই দায় শেষ!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে চার বিঘা বনভূমি দখলের ঘটনায় রিলায়েন্স ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজকে কৌশলে ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

নবনির্মিত বাউন্ডারি ওয়াল ও স্থাপনা উচ্ছেদে গত এক মাসেরও বেশি সময়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বন বিভাগ।

ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিট অফিস একটি পিওআর মামলা ও একটি পত্রিকায় কথিত প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দায় সেরেছে।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্লাস্টিকের বস্তা ও কার্টন তৈরির কারখানা রিলায়েন্স ফাইবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজারের দক্ষিণ পাশে গড়ে উঠেছে। এর মালিক ঢাকার কাজী শওকত জামান রুমেল।

কারখানাটির সাত বিঘা জমির মধ্যে পাঁচ বিঘা সিএস ৬৭৫ নং দাগের গেজেটভুক্ত বনভূমি। পর্যায়ক্রমে তাতে স্থাপনা নির্মাণ করে দখল পাকাপোক্ত করা হয়েছে।

গত পাঁচ-ছয় বছর আগে উত্তর পাশের বনভূমিতে নির্মাণ করা হয় একটি বড় গোডাউন। চলতি বছর পূর্ব পাশে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়।

পরে ভেতরে নির্মাণ করা হয় পাকা স্থাপনা। বিট অফিসের লোকজন প্রথমে বাধা দিয়ে বাউন্ডারি ওয়ালের কিছু কিছু অংশ ভেঙে দিলেও শেষে চুপসে যান।

এর আগে কারখানার উত্তর পাশের বনভূমিতে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়। এত বড় ঘটনা জবর দখল তালিকায়ও চেপে যাওয়া হয়েছে।

ওই স্থানে বিঘাপ্রতি জমির বর্তমান বাজারমূল্য চার কোটি টাকা। সে হিসাবে দখলীয় জমির মূল্য দাঁড়ায় ১৬ কোটি টাকা।

সাম্প্রতিক দখলের ঘটনায় বিট কর্মকর্তা শাহান শাহ আকন্দ কারখানাটির ভেতরে বনের কোন জমি নেই বলে আলোকিত নিউজের কাছে দাবি করেছিলেন।

এরপর অনুসন্ধান করে কারখানার ভেতরে চার বিঘা বনভূমি থাকার তথ্য উদঘাটন করে আলোকিত নিউজ। এ নিয়ে গত ১৯ জুন একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে চলে তোলপাড়।

পরে বিট অফিস মালিক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ব্যাক ডেটে একটি পিওআর মামলা দায়ের করে। কিন্তু নবনির্মিত বাউন্ডারি ওয়াল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারখানা কর্তৃপক্ষ একাধিক বন কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ সম্পন্ন করেছে। এখন ঘটনা ফাঁস হওয়ায় সাধারণ মামলা দিয়ে দায় এড়ানো হচ্ছে।

একজন বন কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে শুধু পিওআর মামলা যথেষ্ট নয়। যারা দখলের সুযোগ দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি বনভূমি রক্ষায় স্থাপনা উচ্ছেদ করা জরুরি।

এলাকাবাসী বলছেন, কোম্পানি বা প্রভাবশালীরা বনভূমি দখল করলে সহজে কিছু হয় না। সাধারণ মানুষ বিট অফিসে টাকা না দিয়ে থাকার ঘর বা টয়লেট তৈরি করলে সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।

প্রতিবাদ সমাচার : আলোচিত ঘটনাটি আলোকিত নিউজে প্রকাশিত হওয়ার পর একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিট অফিস। যদিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত টাকার বিনিময়ে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া বিট কর্মকর্তার এখতিয়ার বহির্ভূত।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলোকিত নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর এক দালাল সাংবাদিক রেঞ্জ ও বিট অফিসে ছুটে যান। প্রতিবাদ দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে-এমনটি বুঝিয়ে তিনি বিজ্ঞপ্তি নিয়ে অন্য একটি পত্রিকায় ছাপান।

অতীত তথ্য অনুযায়ী, ওই দালাল কয়েক বছর ধরে এই নির্লজ্জ ব্যবসা করছেন। চামচামির কারণে তিনি লুটেরা কর্মকর্তাদের কাছে বেশ প্রিয়।

আরও পড়ুন : গাজীপুরে দেয়াল তুলে স্থাপনা, ১৬ কোটি টাকার বনভূমি হজম!

আরও খবর