গাজীপুরে মাদক উদ্ধারের নামে ডিবির এসআই রকিবের লুটপাট
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে মাদক উদ্ধারের নামে বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই (নিরস্ত্র) রকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে সদর উপজেলার ভবানীপুর নয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে জানা যায়, স্থানীয় মোখলেছুর রহমানের ছেলে আসাদুল ইসলাম (২৭) মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বেলা দুইটার দিকে ডিবির এসআই রকিবুল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তার বাড়িতে অভিযান চালান।
তারা ঘরে ঢুকে আসাদুলকে না পেয়ে ড্রেসিং টেবিল ও ঘরের সিলিং ভাঙচুর করেন। কিছুক্ষণ পর বাইরে এসে চার-পাঁচ প্যাকেট ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া গেছে বলে দেখান। পরে সাক্ষী হিসেবে সাদা কাগজে বাড়ির ভাড়াটিয়া আবদুর রহিম ও তার স্ত্রী, আসাদুলের ভাবি মোসলিমা এবং প্রতিবেশী নুরুদ্দিনের স্বাক্ষর ও মাইনুদ্দিনের টিপসই নেওয়া হয়।
ভাড়াটিয়া আয়েশা আলোকিত নিউজকে বলেন, সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ তার ঘরে ঢুকতে চাইলে তিনি পরিচয় জানতে চান। তখন তাকে ধমকিয়ে ধরে নেওয়ার ভয় দেখায়। তার অটোচালক স্বামীকেও রাস্তা থেকে ধরে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
নুরুদ্দিন বলেন, আমি বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। পরে ডেকে নিয়ে আমাকে ধমক দিয়ে কাগজে সই দেওয়ায়।
আসাদুলের পরিবার অভিযোগ করেন, ডিবি তাদের ঘরের শোকেস থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা, উঠান থেকে পৌনে তিন লাখ টাকা দিয়ে কেনা একটি নতুন জিক্সার মোটরসাইকেল, একটি স্মার্টফোনসহ পাঁচটি মোবাইল ও রাউটারসহ সিসি ক্যামেরা নিয়ে গেছে। তারা ভয়ে কিছু বলেননি।
আসাদুলের ভাই রাজু গত ১০ অক্টোবর এসআই রকিবুলের সাথে মোটরসাইকেল ফেরতের বিষয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ছুটিতে বাড়িতে আছেন জানিয়ে অফিসে এসে কথা বলবেন বলে জানান। আসাদুলকে গ্রেফতারের পর যোগাযোগ করলে তাকে গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলা হয়।
এদিকে অভিযানে ইয়াবা উদ্ধার ও মালামাল জব্দের ঘটনায় এসআই রকিবুল বা তার সঙ্গীয় কেউ কোন মামলা করেননি। এক মাসেরও বেশি সময় পর গত ২০ অক্টোবর আসাদুলকে গ্রেফতার করা হয়।
এবার সঙ্গীয় এসআই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১৪। এসআই রকিবুল মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হন।
মামলায় বলা হয়, ২০ অক্টোবর বেলা দুইটা ৫ মিনিটে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশের রক্ষিতপাড়া এলাকায় (রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তার পাশে) ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অবস্থানকালে আসাদুলকে ৭০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। ইয়াবাগুলো তার লুঙ্গির ডান কোচে সাদা পলিথিনে মোড়ানো চারটি জিপারে ছিল। এ সময় তার সহযোগী কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাজিরপাড়া গ্রামের ফিরোজ খান পালিয়ে যান। উদ্ধারকৃত ইয়াবার মূল্য আনুমানিক দুই লাখ ১০ হাজার টাকা।
এজাহারে আসাদুলের বিরুদ্ধে থাকা আগের তিনটি মাদক মামলার তথ্য উল্লেখ করা হয়। মামলাগুলো যথাক্রমে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের।
প্রশ্ন উঠেছে, গত মাসের অভিযানে ইয়াবা উদ্ধার ও মালামাল জব্দের ঘটনায় মামলা হয়নি কেন? চার-পাঁচ প্যাকেট ইয়াবা গেল কোথায়?
আসাদুলের স্বজনরা দাবি করছেন, ওই দিন মাদক উদ্ধারের নামে মোটরসাইকেলসহ তাদের মালামাল ও টাকা লুট করা হয়েছে। প্রশাসন তদন্ত করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
অপরদিকে আসাদুলকে গ্রেফতারের সময় তার সাথে থাকা নয়াপাড়ার আলাল উদ্দিন আলোকিত নিউজকে বলেন, ২০ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে তারা বাসে করে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় যান। তখন ডিবি তাদের ঘিরে ফেলে। পরে আসাদুলের কাছে কিছু না পেলেও তাকে প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যায়।
আসাদুলের বাবা-মা বলছেন, আসাদুল আগে খারাপ কাজে জড়িত ছিলেন। তিনি কয়েক মাস ধরে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে খাবার হোটেলের ব্যবসা করছেন। কেউ ভালো হতে চাইলে তাকে তো সুযোগ দিতে হবে।
জানতে চাইলে এসআই রকিবুল ইসলাম আলোকিত নিউজকে বলেন, গত মাসের অভিযানে মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এলাকার লোকজনের সামনে জব্দ তালিকা করেছেন। টাকা, মোবাইল ও সিসি ক্যামেরা নেননি। ইয়াবাও পাওয়া যায়নি।
আগের অভিযানে মামলা না হওয়া ও পরের মামলার জব্দ তালিকায় মোটরসাইকেল না দেখানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তখন আসাদুল পালিয়ে যাওয়ায় মামলা হয়নি। মোটরসাইকেল পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়ায় মামলার জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। আদালতে আলাদা জব্দ তালিকা দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর আদালতের একজন আইনজীবী আলোকিত নিউজকে বলেন, মোটরসাইকেল বাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার আর পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার এক কথা নয়। কোন জিনিস কোথাও পরিত্যক্ত অর্থাৎ বেওয়ারিশ অবস্থায় পাওয়া গেলে নিকস্থ থানায় বা কারও জিম্মায় রাখা হয়। আদালতে জব্দ তালিকা জমা দেওয়ার কিছু নেই।
একজন পুলিশ পরিদর্শক আলোকিত নিউজকে বলেন, একজন লোককে এক স্থান থেকে আটক করে সুবিধামত দূরের অন্য স্থানে নিয়ে ইয়াবা উদ্ধার ও গ্রেফতার দেখানো রহস্যজনক। আর কারও বাড়ি থেকে এভাবে মোটরসাইকেল নিয়ে আসাও নিয়মে নেই। সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক লুৎফুল কবির আলোকিত নিউজকে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।