গাজীপুরে ‘বনের রাজা’ ফরেস্টার হাসেম বহাল তবিয়তে!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে মূল্যবান বনভূমি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিচ্ছেন বিট কর্মকর্তা আবুল হাসেম চৌধুরী।

ভবানীপুর ও বনখড়িয়া বিট অফিস ঘুরে তিনি এখন জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের পার্ক বিটে কর্মরত আছেন।

তদন্তে অন্তত তিনটি দখলের ঘটনায় তার যোগসাজশ থাকার প্রমাণ মিললেও কোন শাস্তি ভোগ করতে হয়নি।

এমনকি শেরপুরে বদলির আদেশ হলেও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকনের প্রশ্রয়ে রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসেম চৌধুরী ভবানীপুর বিটে থাকাকালীন ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তাকে হাত করে অবাধে দখল হয় গেজেটভুক্ত বনভূমি।

ভবানীপুর স্কুল রোডে লীরা ডোরস অবস্থিত। কারখানাটি ১২৫০ নং দাগের প্রায় ২৬ শতাংশ বনভূমি দখল করে নতুন স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে।

বনভূমি দখল করে লীরার স্থাপনা

ঘটনাটি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৮ জানুয়ারি আলোকিত নিউজ ডটকমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তদন্ত কমিটি গঠন করে বন বিভাগ।

পরে সহকারী বন সংরক্ষক কাজী নূরুল করিম তদন্তে সত্যতা পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। একই সাথে নিজ দায়িত্বে স্থাপনা সরানোরও নোটিশ দেওয়া হয়।

কিন্তু গত দুই বছরেও লীরা গ্রুপের মালিক কোন সাড়া দেননি। বন কর্মকর্তারাও এখন নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

ভবানীপুর বিট অফিসের কাছে শিরিরচালা এলাকায় ইভিন্স গ্রুপ অবস্থিত। ২৫১ নং দাগসহ কয়েকটি দাগের জমি দখল করে কারখানা সম্প্রসারণ করা হয়।

এভাবেই বনভূমি দখল করে ইভিন্স

ঘটনাটি নিয়ে ২০১৭ সালের ১৬ মে আলোকিত নিউজে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তদন্ত করেন এসিএফ কাজী নূরুল করিম।

পরে তদন্ত কমিটি কারখানার দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করলেও অদ্যাবধি কোন ফল হয়নি।

দুটি ঘটনাতেই হাসেম চৌধুরী সহায়তা করেন। আর লীরার ঘটনা জেনেও নীরব থাকেন সাবেক ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ হোসেন।

ভবানীপুরে হামজা কেমিক্যাল কারখানার উচ্চতাপে পৌনে ১০০ আকাশমনি গাছ মরে যায়। ঘটে পরিবেশ দূষণ।

ঘটনাটি নিয়ে ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি আলোকিত নিউজে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তৎপর হয় বন বিভাগ।

পরে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর নমুনা পরীক্ষা করে কারখানাটিকে এক লাখ ৮৬ হাজার টাকা জরিমানা করে।

এসব ঘটনায় হাসেম চৌধুরীকে বনখড়িয়া বিটে বদলি করা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় বিভাগীয় মামলা।

এরপরও ডিএফও জহির আকন তার প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শন করেন। বদলি নীতিমালা লঙ্ঘন করে তিন মাসের ব্যবধানে নিয়ে আসেন পার্ক বিটে।

এদিকে ভবানীপুর ও বানিয়ারচালা এলাকার মোশারফ কম্পোজিট ৪৮৭ নং দাগের ২৪ শতাংশ বনভূমি দখল করে গড়ে তুলে পাঁচ তলা অফিসার্স ভবন।

বনভূমিতে মোশারফ কম্পোজিটের ভবন

ছাড়পত্রের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর অবস্থানগত মতামত চাইলে হাসেম চৌধুরী ও শাহ মোহাম্মদ হোসেন সেখানে বনের কোন জমি নেই বলে প্রতিবেদন দেন।

প্রতিবেদনটি সন্তোষজনক না হওয়ায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে আবারও প্রধান বন সংরক্ষককে তাগিদ দেওয়া হয়।

পরে এসিএফ কাজী নূরুল করিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি মাপজোখ করে বনভূমি দখলের ঘটনা উদঘাটন করে।

এ ব্যাপারে হাসেম চৌধুরী আলোকিত নিউজকে বলেন, লীরা ও ইভিন্সের ঘটনায় বিভাগীয় মামলা হয়েছে। আপনি আমার ক্ষতি করলেন।

মোশারফ কম্পোজিটের বিষয়ে বলেন, ওই জমি অনেক আগে থেকে তাদের। তদন্ত বিরুদ্ধে গেলেও আমার কিছু হয়নি।

বদলির পরও না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি তো চলে যেতে চাই। কর্তৃপক্ষ রিলিজ দিচ্ছে না।

আরও খবর