গাজীপুরের কাশিমপুর ভূমি অফিসে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য চলছেই
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের কাশিমপুর ভূমি অফিসে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য চলছেই।
টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের আওতাধীন এই অফিসে বাণিজ্য বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
ফলে উমেদার নামধারী দালালদের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা লেনদেন ও জনসাধারণের ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে বিষয়টির ওপর গত ১৫ নভেম্বর আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে চলে ব্যাপক তোলপাড়।
পরে চতুর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বড় দালাল আল-আমিন, তারেক, আজাদ ও প্রবীর চন্দ্রকে অফিসের ভেতরে চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করা থেকে বিরত রাখেন।
তবে আল-আমিন, তারেক ও আজাদ ভূমি অফিসের উত্তর পাশের মাতৃ মেডিকেল হল সংলগ্ন চায়ের দোকানে বসে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অফিস সময় শেষে ভেতরে গিয়ে টাকা বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যমতে, কাশিমপুর ভূমি অফিস জেলার ভূমি অফিসগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় লোভনীয় অফিস। এখানে তদবির ছাড়া পোস্টিং হয় না বলে প্রচার রয়েছে। ভূমি কর্মকর্তারা বাণিজ্যের সুবিধার্থে বেশ কয়েকজন দালাল নিয়োগ করেছেন।
তারা অফিসের চেয়ার-টেবিলে বসে ল্যাপটপ ও কম্পিউটার নিয়ে সরকারি কর্মচারীর মত কাজ করেন। কেউ জমির নামজারি ও জমাভাগ, কেউ খাজনা আদায়, কেউ বা মিস কেসের প্রতিবেদন তৈরির কাজে ব্যস্ত।
আলোকিত নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশের পর অফিসে ঢুকতেই ডান পাশের একটি ও সিঁড়ি সংলগ্ন স্থানের দুটি টেবিল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। টেবিলগুলোতে প্রবীর, আরজু ও তুষার বসতেন। অন্যরা বহাল রয়েছেন।
তাদের মধ্যে দালাল মাসুদ ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আবদুর রহিমের টেবিলের সামনে ল্যাপটপ নিয়ে, আজহার পূর্ব পাশের রুমের কম্পিউটার ডেস্কে, রুবেল সিঁড়ি সংলগ্ন স্থানের কম্পিউটারে ও রফিক অফিস সহায়ক গোলাম মোস্তফার পাশে বসে নিয়মিত কাজ করছেন। সবাইকে সাবধানে লেনদেন করতে বলা হয়েছে।
আগে দালাল তারেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের রুমে বসে কাজ করতেন। এখন দালাল আজহারকে দিয়ে বেশির ভাগ কাজ করানো হচ্ছে। ভূমি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব থাকলেও আজহার খারিজের নথি তৈরি করছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, জমির খারিজের আবেদন করার পর অফিসে যোগাযোগ করলে নায়েবরা উমেদারদের দেখিয়ে কথা বলতে বলেন। পরে উমেদারদের দাবি অনুযায়ী ঘুষ দিলে কাজ হয়ে যায়। নয়তো নানা ভুল-ত্রুটি ধরে হয়রানি করা হয়।
উমেদাররা জানান, কাশিমপুর ভূমি অফিসে ঘুষের বিভিন্ন রেট রয়েছে। সাধারণ খারিজ থেকে খারিজে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত তিন হাজার টাকা, ৫০ শতাংশের ওপরে ৫-১০ হাজার টাকা, মূল জমি থেকে খারিজে ১০ হাজার টাকা এবং অর্পিত সম্পত্তির অবমুক্ত হওয়া ‘খ’ তফসিলভুক্ত জমির খারিজে ১০-২০ হাজার টাকা করে দিতে হয়। এসিল্যান্ড অফিসের রেট আলাদা।
এ ছাড়া খারিজের আবেদনে জমির পরিমাণ বেশি থাকলে কিংবা পার্ট দাগ বা কাগজপত্রে কোন ত্রুটি থাকলে রেট বেড়ে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এসব ওপেন সিক্রেট।
এসিল্যান্ড অফিস সূত্র জানায়, কাশিমপুর ভূমি অফিস থেকে মাসে ৩০০-৪০০ নামজারি ও জমাভাগের নথি আসে। এর মধ্যে কিছু থাকে ব্যক্তি বিশেষের, আর কিছু বাতিল। বাকিগুলো থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বাণিজ্য হয়।
ভূমি সহকারী কর্মকর্তা লুৎফর রহমান কাশিমপুর ভূমি অফিসে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর যোগদান করেন। গত ২৩ অক্টোবর তার তিন বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তিনি আদায়কৃত ঘুষের সিংহভাগ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
একাধিক ভূমি কর্মকর্তা আলোকিত নিউজকে বলেন, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে। জেলা কোটায় চাকরি হলেও তিনি ওপরে তদবির করে গাজীপুরে পোস্টিং নেন। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। সব সময় লোভনীয় অফিসে পোস্টিং পাচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, এসিল্যান্ডের সাথে লুৎফর রহমানের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তাই এসিল্যান্ড সকল বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।
এসিল্যান্ড যা বললেন : বিষয়টি নিয়ে সোমবার বিকেলে টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিল্লুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি আলোকিত নিউজকে বলেন, অফিসে কোন উমেদার নেই। এখন কোন উমেদার কাজ করে না। সবগুলো বের করে দিয়েছি।
দুই মিনিট পর এসিল্যান্ড ফোন করে বলেন, কাশিমপুর ভূমি অফিসে কি আপনি কোন কাজে গিয়েছিলেন, কোন সমস্যা হয়েছিল আপনার? কে আপনাকে তথ্য দিয়েছিল? এর আগে যে নিউজ করেছেন, আন্দাজে নিউজ করলে তো হবে না।
তিনি আরও বলেন, যদি আপনি নিজে গিয়ে কোন কাজের ক্ষেত্রে সাফারিং হন, সেটা বলতে পারেন। আপনি যে বললেন, নিউজ পারপাসে গিয়ে কার কাছ থেকে কী শুনে কী বলেছেন। এরপর সংযোগ কেটে দেন।
উল্লেখ্য, কাশিমপুর ভূমি অফিসের আরও ঘুষ-দুর্নীতি, সরকারের রাজস্ব আত্মসাৎ ও দায়িত্বশীলদের কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য মিলছে। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন আলোকিত নিউজে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরের কাশিমপুর ভূমি অফিসে ঘুষ বাণিজ্য, দালালও কোটিপতি!
বিশেষ দ্রষ্টব্য : আলোকিত নিউজে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সাংবাদিক নামধারী কতিপয় দালাল ধান্ধাবাজিতে লিপ্ত হয় মর্মে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হল।