গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে ফরেস্টার আরিফের আখেরি লুটপাট

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিটে সীমাহীন লুটপাট চলছে।

বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে বনপ্রহরী নুরুল ইসলাম আখেরি বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন।

এর মধ্যে নুরুল ইসলাম মহানগরীর ভাওয়াল কলেজের পাশে ইটাহাটা গ্রামে জমি কিনে ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি করছেন। অবসরের সময় ঘনিয়ে আসায় তিনি এখন বেপরোয়া।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ২ নং গেটের পশ্চিমে নান্দুয়াইন এলাকা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশ থেকে ঘন গজারি বন। এলাকাটি সংরক্ষিত কোর জোনের আওতাধীন।

এখান থেকে বনের বুক চিরে তৈরি করা হয়েছে ১২ ফুট প্রস্থের রাস্তা। প্রাথমিকভাবে ইট ও বালু ফেলা হয়েছে। দিন-রাত চলছে ট্রাক, কারখানার কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইভেটকার।

রাস্তা ধরে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে দেখা গেল একটি কারখানা। নাম রুপম এগ্রো লিমিটেড। বন ঘেঁষে বাউন্ডারির ভেতরে চলছে নতুন তিন তলা ভবনের নির্মাণ কাজ। গেটের সামনে গাছ কেটে দখল করা হয়েছে প্রায় চার শতাংশ বনভূমি।

কথা বলতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ সামনে আসেননি। নিরাপত্তা প্রহরী মফিজুল ইসলাম জানালেন, গত জুন থেকে নতুন ভবনের কাজ চলছে। মূল স্থাপনা আগের।

একাধিক এলাকাবাসী জানান, ওই রাস্তা আগে সাধারণ ছিল। ইতিমধ্যে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য ইট-বালু ফেলা হয়েছে। নাফিস গার্ডেন মোড় থেকে রুপম এগ্রো পর্যন্ত এক হাজার ফুট সরু রাস্তা ১০ ফুট প্রস্থ করা হয়েছে। এতে কিছু গাছও কাটা পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন বিভাগের একজন বলেন, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এলাকায় ২০১২ সাল থেকে কারখানা সম্প্রসারণ ও পরিচালনা নিষিদ্ধ। ওই বিট কর্মকর্তা ও বনপ্রহরী পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে রুপম এগ্রোকে রাস্তা দিয়েছেন। রেঞ্জ কর্মকর্তার ভূমিকাও রহস্যজনক।

এদিকে রুপম এগ্রোর রাস্তা থেকে ৫০০ ফুট উত্তরে বনের ভেতরে দোতলা বাংলোবাড়ির নির্মাণ কাজ চলছে। বাড়ির মালিক কাজী মোনাবির হুসেন। ট্রাকযোগে নির্মাণ সামগ্রী নেওয়ায় সাধারণ রাস্তাটি প্রশস্ত হয়েছে। গাছ কেটে করা বাংলোবাড়িতে চলাচলের ১০ ফুট প্রস্থের রাস্তায় ইট-বালু ফেলা হয়েছে।

উপস্থিত দুজন কর্মচারী জানান, গত জুন থেকে কাজ চলছে। বিট অফিস তিনবার হানা দিয়ে ১০-১২ জন শ্রমিক আটক করে নিয়ে যায়। পরে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনা হয়।

সংশ্লিষ্ট একজন জানান, ওই বিট কর্মকর্তা ও বনপ্রহরীর দাবি পূরণ করার পর আর সমস্যা হচ্ছে না। একজন কাউন্সিলর মধ্যস্থতা করেছেন। এর আগে বাংলোবাড়ির দখল থেকে কিছু বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।

হিসাব করে দেখা গেছে, রুপম এগ্রো ও বাংলোবাড়িকে রাস্তা দেওয়ায় প্রায় দেড় বিঘা সরকারি সম্পদ বেহাত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে কোর জোনে এটি বড় ঘটনা।

এ ব্যাপারে বাউপাড়া বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম আলোকিত নিউজকে বলেন, রাস্তাটি অনেক আগের। আমি কেটে দিয়েছি।

তার আমলে সরু রাস্তা প্রশস্ত করা, গাছ কাটা, ইট-বালু ফেলা ও এক জায়গায় সামান্য কাটা অংশ পুনরায় ভরাটের বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, অফিসে আসেন। সাক্ষাতে কথা বলব।

এর আগেও বাউপাড়া বিটে দখল বাণিজ্যের ওপর আলোকিত নিউজে কয়েকটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে বন বিভাগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে। ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকনও সোচ্চার হন। কিন্তু অভিযুক্ত ওই দুজনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আরও খবর