ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দুর্নীতির পথকেই প্রশস্ত করবে
মোহাম্মদ মাসুদ : দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা এক বড় প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হবে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারাকে চারটি ভাগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ধারা ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১) সংযুক্ত করা হয়েছে।
নতুন আইনের ৩২ ধারা এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। এই ধারায় অনুমোদন ব্যতিরেকে সরকারি তথ্য সংগ্রহ করলে তাকে গুপ্তচরবৃত্তি বলে বিবেচনা করা হতে পারে।
ফলে এই আইনের ভেতরে এমন ব্যবস্থা রেখে দেওয়া হয়েছে, যা কেবল শাসন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিরুদ্ধেই নয়, কার্যত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের পথকেই প্রশস্ত করবে।
গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদিত হওয়ার পর দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
এটা স্পষ্ট যে, ২০১৬ সালে এই আইনের প্রস্তাব উপস্থাপনের পর বিভিন্ন বৈঠকে যেসব নেতিবাচক দিক চিহ্নিত করা হয়েছিল, সরকার সেগুলো আমলে নেয়নি।
কিঞ্চিৎ যে সংশোধন বা পরিবর্তন করা হয়েছে, তাতে এই আইনের উদ্দেশ্য বা মর্মবস্তুর কোন বদল ঘটেনি।
এই আইনের আওতায় সরকারি তথ্য সুরক্ষার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাতে যে জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়নি, সেটা সহজেই বোধগম্য।
যে দেশে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করার পর সবাই উৎফুল্ল হয়েছিল, সে দেশে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে এত দিন ধরে যে ৫৭ ধারা বজায় ছিল, সেটাই ছিল দুর্ভাগ্যজনক।
এখন তার বদলে ভয়াবহ বিষয় যুক্ত হচ্ছে। যা আসলে ১৯২৩ সালের দাপ্তরিক গোপনীয়তা আইনের ৩ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধের শাস্তির বিধান।
সাম্প্রতিক আলোচনা-সমালোচনায় এই আইনের যেসব প্রতিক্রিয়া পড়বে বলা হচ্ছে, এর অধিকাংশই সাংবাদিক ও সংবাদ মাধ্যমের ওপর।
বাংলাদেশ বিষয়ে যারা গবেষণা করেন, বিশেষত ইতিহাস ও রাজনীতি নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে বসে স্বাধীনভাবে গবেষণা করতে চান, তাদের জন্য আইনে এমন কিছু আছে, যা উদ্বিগ্ন করার কথা।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব নিয়ে সমাজবিজ্ঞানের গবেষক বা শিক্ষকদের মধ্য থেকে এখনো শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
যদিও বলা হচ্ছে, এই আইনের বিভিন্ন বিধান মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে। কিন্তু এই বক্তব্যই যথেষ্ট নয়।
একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে আমি মনে করি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার। আজ কী এসবের মূল্য আছে?
যে ক্ষমতায় গিয়েছে, সে তার মত করে সবকিছু পরিচালনা করেছে, স্বাধীনতার চেতনার ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয় তারা। সেই ব্যাখ্যা কোন অবস্থাতেই আমি মানতে পারি না।
২০১২ থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত আইসিটি আইনে এক হাজার ৪১৭টি মামলা হয়েছে, যার ৬৫ শতাংশ ৫৭ ধারা।
অনুমোদিত নতুন আইনে মামলার সংখ্যা কী পরিমাণ বাড়বে, তা কী অনুমান করতে পারছি আমরা?
লেখক : সম্পাদক, দৈনিক অন্যদিগন্ত।