গাজীপুরের মনিপুর বিটে দখল বাণিজ্য জমজমাট
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের মনিপুর বিটে বনভূমি বেচাকেনা ও দখল বাণিজ্য জমে উঠেছে।
ঢাকা বন বিভাগের অধীন রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের এই বিটে দীর্ঘদিন ধরে এসব চললেও দেখার যেন কেউ নেই।
ইতিপূর্বে আলোকিত নিউজ ডটকমে কয়েকটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও তদন্তের নামে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।
ফলে মূল্যবান বনভূমি বেহাতের পাশাপাশি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নির্ভয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, বিট কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোর না হওয়ার সুযোগে আখের গোছাচ্ছেন তিনি।
বেগমপুর হোতাপাড়া এলাকার সিএস ও এসএ ৫৯৮ নং দাগের জমি বনের নামে গেজেটভুক্ত। এ নিয়ে বন বিভাগের পক্ষে আদালতে আরএস রেকর্ড সংশোধনীর মামলাও বিচারাধীন।
সেখানে প্রায় ছয় শতাংশ জমি কিনেন সরকারি চাকরিজীবী আবদুল মতিন। গত বছর পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে শুরু করেন বাড়ির নির্মাণ কাজ।
প্রায় ৩৫ লাখ টাকা বাজারমূল্যের ওই জমি সান পাওয়ার সিরামিকস কারখানার উত্তর পাশে অবস্থিত। তাদের ডিমারকেশনও নেই।
বিষয়টি নিয়ে গত ১ অক্টোবর আলোকিত নিউজে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর তদন্ত চললেও দোতলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে ৩৫ লাখ টাকার বনভূমিতে উঠছে ৫ তলা!
একই দাগে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশে সাড়ে তিন কাঠা জমিতে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ভবন নির্মাণ করছেন বেলায়েত হোসেন ডাক্তার।
ভবনটির তৃতীয় তলার কাজ শেষ পর্যায়ে। নিচ তলা সিটি টাইলস গ্যালারির কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
এর পশ্চিম পাশে পাঁচ কাঠা জমিতে সাদ-সৈকত প্লাজা নামে পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করছেন মোশারফ হোসেন দুলাল। সেটারও তৃতীয় তলার কাজ শেষ পর্যায়ে।
এলাকাবাসী জানান, গত বছর থেকে ভবন দুটির কাজ চলছে। তাদের কারও যৌথ ডিমারকেশন নেই।
এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা আলোকিত নিউজের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। কথা বলেছেন বনপ্রহরী জয়নাল।
তিনি বলেন, এগুলো বনের অংশে পড়েনি। আমরা সার্ভেয়ার দিয়ে মাপজোখ করে ডিমারকেশন দিয়েছি।
মামলা বিচারাধীন অবস্থায় ডিমারকেশন করা যায় কি না, প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তাদের নামে আরএস রেকর্ড আছে। তাই করা যায়।
ডিমারকেশনের সময় জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন কি না, জানতে চাইলে জয়নাল বলেন, না, আমরা করেছি। তারা পরে যৌথভাবে করে নিবে।
অথচ নিয়ম অনুযায়ী, তর্কিত ভূমি এককভাবে ডিমারকেশনের কোন সুযোগ নেই। আর ডিমারকেশন ব্যতীত ভবন বা পাকা স্থাপনাও নির্মাণ করা যাবে না।
হোতাপাড়ার পশ্চিমে মনিপুর রোডে অটোস্ট্যান্ডের পাশে আনোয়ার মোস্তফার প্লট। জমি আড়াই বিঘা।
সেখানে স্থানীয় আলাউদ্দিন ছোট প্লট আকারে জমি বিক্রি করছেন। জমিতে প্রবেশের নিজস্ব রাস্তা না থাকায় ধীরে ধীরে কাটা হচ্ছে গজারি গাছ।
বিট অফিস ওই প্লটেরও কথিত ডিমারকেশন দিয়েছে। এখন বনভূমি দখল করে ইট-বালু এনে প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে।
একই রোডে কিছুদূর এগোলে বোকরান মনিপুর। সেখানকার এলিগেন্স কারখানার পূর্ব পাশে বনের ভেতরে ফাউন্ডেশন বাড়ির কাজ চলছে।
স্থানীয় রবীন্দ্র বিশ্বাস বাড়িটি করছেন। তার জমির তিন পাশে বনভূমি ও অপর পাশে কারখানার প্রাচীর।
জমিতে প্রবেশের কোন রাস্তা না থাকলেও কাজের অনুমতি দিয়েছে বিট অফিস। এখন বনভূমি দখল করে নির্মাণ সামগ্রী এনে কাজ করা হচ্ছে।
এদিকে গত ২০ মার্চ আলোকিত নিউজে ‘গাজীপুরের মনিপুর বিটে বনভূমি দখলের হিড়িক’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
তথ্যবহুল এই প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।