কাপাসিয়ায় ‘রোগী মারা’ হাসপাতাল ফের চালু!
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের কাপাসিয়ার বিতর্কিত আমরাইদ জেনারেল হাসপাতাল ফের চালু করা হয়েছে।
বেসরকারি এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা ও রোগী মারা যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
গত এপ্রিলে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় এটি সিলগালা করে দিয়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমত আরা।
এক মাস পর তারই অনুমতি নিয়ে আবারও কার্যক্রম শুরু করেন পরিচালক জহিরুল ইসলাম সিকদার ওরফে আলম।
সরেজমিনে জানা যায়, আমরাইদ বাজার এলাকার টোক রোডে হাসপাতালটি অবস্থিত। রোগী টানতে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষ চটকদার প্রচারণায় আকৃষ্ট হচ্ছেন। অপচিকিৎসার বিপরীতে কিছু সেবাও মিলছে।
পাশের বারিষাব ইউনিয়নের কুশদী গ্রামের ব্যবসায়ী রায়হানের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তানিয়া (১৮) গত ২২ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন।
পরে সিজারিয়ান অপারেশনে তার পুত্র সন্তান হয়। কিন্তু যথাযথভাবে ফলোআপ চিকিৎসা না করায় ২৪ এপ্রিল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
এ ঘটনায় নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ইউএনও।
তিনি নানা অনিয়ম দেখে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেন। ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে ঘটনা তদন্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি কনসালটেন্ট আয়েশা সিদ্দিকাকে আহ্বায়ক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার মামুনুর রহমানকে সদস্যসচিব করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন ইউএনও।
কমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে প্রথমত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও দ্বিতীয়ত কথিত সার্জন জাহিদুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্ত করে গত ৪ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
এরপর প্রতিবেদনের আলোকে মামলা করাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গত ২৭ মে কাপাসিয়া থানার ওসিকে চিঠি দেন ইসমত আরা।
এর দুই দিন পর আলম সিকদার ইউএনও বরাবর সিলগালা খুলে দেওয়ার আবেদন করেন। পরে তিনি তালা খুলে দেন।
এই সুযোগে পুলিশও রহস্যজনক নীরবতা পালন করে। চাপা পড়ে সকল আইনি আয়োজন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কথিত সার্জন জাহিদুল স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা এবং জেনারেল সার্জারির কোন ডিগ্রি বা প্রশিক্ষণের সনদ দেখাতে পারেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উচ্চতর ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ সনদবিহীন চিকিৎসক দ্বারা অপারেশন করিয়েছে।
একই সাথে পোস্ট অপারেটিভ ফলোআপের অভাব আছে। কথিত সার্জনের ঝুঁকিপূর্ণ প্রসব সম্পর্কিত অভিজ্ঞতার ঘাটতি রোগীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।
এ ব্যাপারে ওসি রফিকুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি তারিখ ও স্মারক নম্বর নিয়ে চিঠিটি খুঁজে বের করেন।
কিছুক্ষণ পর রফিকুল ইসলাম আলোকিত নিউজকে বলেন, নিহতের পরিবারের কেউ মামলা করতে আসছে না। এরপরও আমরা ব্যবস্থা নিব।