গাজীপুরে সংরক্ষিত বনের ভেতর ফাউন্ডেশন বাড়ির ছড়াছড়ি

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে সংরক্ষিত বনের ভেতরে দেদারসে গড়ে উঠছে ফাউন্ডেশন বাড়ি।

ভাওয়াল রেঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম ও বারইপাড়া বিটে দীর্ঘদিন ধরে এসব চললেও কর্তৃপক্ষের ভ্রুক্ষেপ নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিটের নয়নপুর বড়ই বাগান এলাকায় গজারি বনের ভেতরে জোতভূমি। সেখানে গড়ে উঠেছে কয়েকটি ফাউন্ডেশন বাড়ি।

বড় পরিসরে তিন তলাবিশিষ্ট সোনালী স্বপ্ন নির্মাণ করা হয়েছে চার-পাঁচ বছর আগে। বাড়িটির সামনের অংশে ধীরে ধীরে মরছে গজারি গাছ।

উত্তর পাশে জমি কিনে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি করছেন প্রবাসী সুমন সিকদার। বনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী।

দক্ষিণ পাশে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নাসির চার তলা বাড়ির দোতলা পর্যন্ত করেছেন আগে। এখন চলছে তৃতীয় তলার কাজ।

নাসিরের বাড়ি

বাড়িগুলোতে প্রবেশের নিজস্ব কোন রাস্তা নেই। বনের ভেতর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একাধিক রাস্তা।

রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পূর্ব পাশে ডক্টর ভিলা। ভবনটির সামনের অংশ জবর দখল।

এর সাথে পাঁচ তলা বাড়ির কাজ শুরু করেছেন মঞ্জু আরার ছেলে মামুন। প্রবেশের কোন রাস্তা না থাকায় আকাশমনি বাগানের একাংশ দখলে নেওয়া হচ্ছে।

পল্লী বিদ্যুতের পশ্চিম পাশে ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি করছেন স্থানীয় নূরুন্নবীর মেয়ের জামাই। আকাশমনি বাগানের ভেতর দিয়ে করা হয়েছে প্রবেশের রাস্তা।

রাজেন্দ্রপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উত্তর পাশে গোলাম রাব্বানীর ছয় তলা বাড়ির তৃতীয় তলার কাজ চলছে। গজারি বনের ভেতর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আট ফুট প্রস্থের রাস্তা।

রাব্বানীর বাড়ি

রাব্বানী আলোকিত নিউজকে বলেন, ডিসি অফিস ও বন বিভাগ আমাকে ডিমারকেশন দিয়েছে। সাবেক ডিএফও জহির উদ্দিন আকন এসে দেখে গেছেন।

ক্যান্টনমেন্ট থেকে হোতাপাড়া রোড দিয়ে এগোলে গভীর বনের ভেতরে আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের সাইনবোর্ড চোখে পড়ে আলোকিত নিউজ টিমের।

এগিয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার কাজ সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে। ধীরে ধীরে গজারি গাছ মরে সামনের ও উত্তর পাশের অংশ উজাড় হচ্ছে।

আনোয়ারের বাড়ি

প্রতিষ্ঠানটিতে প্রাথমিক পর্যন্ত কিছু শিক্ষার্থী আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কোন কার্যক্রম নেই।

মালিক আনোয়ার হোসেন আলোকিত নিউজকে বলেন, আমাদের কাজে বিট অফিস বাধা দেয়নি। বনের তেমন ক্ষতি হচ্ছে না।

এদিকে বারইপাড়া বিটের নয়নপুর নতুনপাড়া ঈদগাহ মাঠের উত্তর পাশে ছয় তলা বাড়ি করছেন আবদুর রাজ্জাক। দোতলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।

বাড়িটিতে বনভূমি ব্যতীত প্রবেশের কোন রাস্তা নেই। নির্মাণ সামগ্রীর প্রভাবে মারা যাচ্ছে গজারি গাছ।

এখান থেকে পূর্ব দিকে মসজিদের পাশে চার তলা বাড়ি করেছেন সিটি টেইলার্সের মালিক মিজানুর রহমান। এখন চলছে প্লাস্টারের কাজ।

মিজানের বাড়ি

বাড়িটির সামনের অংশ জবর দখল। প্রবেশের নিজস্ব রাস্তা না থাকলেও নিজেরা খুঁটি পুঁতে কথিত ডিমারকেশন দিয়েছে বিট অফিস।

বহেরাতলী ব্রিজের পূর্ব পাশে ফাউন্ডেশন দিয়ে দুটি বাড়ি করছেন শাহজাহান ও আমজাদ। তাদের রাস্তাও বনভূমির ওপর দিয়ে করা হয়েছে।

একজন বন কর্মকর্তা বলেন, স্থাপনাগুলোর বেশির ভাগ কোর জোনে। নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করায় বন, বন্যপ্রাণী, পরিবেশ ও প্রতিবেশ এখন হুমকির মুখে।

তিনি আরও বলেন, বনভূমির ক্ষতি করে বাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। নিজস্ব রাস্তা না থাকলে জমি কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায়।

একাধিক বাড়ির মালিক বলেন, যৌথ ডিমারকেশনে টাকা ও সময় বেশি লাগে। ফাউন্ডেশন বাড়ির ক্ষেত্রে বিট অফিসকে এক-দুই লাখ টাকা দিলে অনুমতি মেলে।

ওয়াকিবহাল একজন বলেন, সীমানা নির্ধারণ ছাড়া বাড়ি করায় জোত ও বনের অংশ অস্পষ্ট। তদন্ত করলে কোথাও কোথাও দখল মিলবে।

এ ব্যাপারে রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিট কর্মকর্তা রেজাউল করিম আলোকিত নিউজকে বলেন, গোলাম রাব্বানী ও মঞ্জু আরার ডিমারকেশন আছে। অন্যদের ডিমারকেশন করতে বলেছি।

বনভূমির মাঝে জোত থাকায় জটিলতা দেখা দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আরও আগে থেকেই বাড়িঘর হচ্ছে। আমরা বন রক্ষায় চেষ্টা করছি।

বারইপাড়া বিটের দায়িত্বে আছেন বনপ্রহরী হোসেন আহমেদ। তিনি সাবেক ডিএফওর আশীর্বাদে আখের গোছাচ্ছেন।

জানতে চাইলে হোসেন আলোকিত নিউজকে বলেন, বাড়ির বিষয়ে রেঞ্জার ও এসিএফ জানেন। আর গাছের বয়স ২০-২২ বছর হলে এমনিতে মারা যায়।

ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম আলোকিত নিউজকে বলেন, আমরা বন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মামলা দিতে পারি। মানুষ ডিমারকেশন করে বৈধতার মধ্যে আসুক।

আরও খবর