গাজীপুরে বনের ভেতর ‘ফাউন্ডেশন বাণিজ্য’ জমজমাট
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে সংরক্ষিত বনের ক্ষতিসাধন করে ব্যাপক হারে ফাউন্ডেশন বাড়ি নির্মাণ চলছে।
ভাওয়াল রেঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম ও বারইপাড়া বিটে এই অনিয়ম দীর্ঘদিন ধরে নিয়মে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার কচি-কাঁচা মাঠের দক্ষিণ পাশে বনের ভেতরে জোতভূমি। সেখানে নির্মিত হচ্ছে নতুন দুটি বাড়ি।
একটি বাড়ি ছয় তলা। আগে দোতলা পর্যন্ত এবং সম্প্রতি তৃতীয় ও চতুর্থ তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বাড়িটির সামনের অংশ গজারি বন। এর মালিক নারিশ কোম্পানির ভালুকা প্রজেক্টের প্রকৌশলী মজিবুর রহমান।
বাড়িতে বনভূমি ব্যতীত প্রবেশের কোন রাস্তা নেই। গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগও বনের ভেতর দিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এর একটু দক্ষিণে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ির কাজ শুরু করেছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারী আসমা খাতুন। ইট ও বালু স্তূপ করে রাখা হচ্ছে বনের ভেতর।
তাদের কারও যৌথ ডিমারকেশন নেই। এভাবে ভবন নির্মাণের ফলে নতুন উদ্ভিদ জন্মানো বন্ধ ও বনের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।
বারইপাড়া বিটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ আলোকিত নিউজকে বলেন, বাড়ি করলে বনের কিছু ক্ষতি তো হবেই। ছয় তলা বাড়ির দিকে আমি তাকাইও না।
তার বিট এলাকায় নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে অনেক বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। খোদ বিট অফিসের ২৫ গজ পশ্চিমে ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি করছেন পিন্টু।
ক্যান্টনমেন্ট বাজারের পশ্চিম পাশে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি করছেন মাকসুদ। সম্প্রতি তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।
ওই বাড়ির পশ্চিমে পাঁচ মাস ধরে ফাউন্ডেশন বাড়ির কাজ করছেন আবদুস সাত্তার ও তার মেয়ের জামাই আমিনুল ইসলাম। সম্প্রতি চতুর্থ তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।
বাড়িটির সামনের অংশ জবর দখল। ক্রমান্বয়ে বন উজাড় হয়ে এখন একাধিক গজারি গাছ মৃত দাঁড়িয়ে আছে।
সংলগ্ন পূর্ব পাশে স্বপ্ননীড় নামে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন বাড়ির তিন তলার কাজ সম্পন্ন করেছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হাসেম সিদ্দিকী। চার ইউনিটের মধ্যে সামনের দুই ইউনিটের কাজ আগে করা হয়।
নয়নপুর পেপসি গেট এলাকায় পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি করছেন নিজাম। সম্প্রতি দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিট এলাকায়ও নিয়ম লঙ্ঘন করে বাড়িঘর ও বিনোদন স্পট নির্মাণ করা হচ্ছে।
ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বিমান বাহিনী রোডের পশ্চিম দিকে ছয় তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি করছেন ব্যবসায়ী সরোয়ার। সম্প্রতি দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।
তার বাড়ির উত্তরে তিন তলা বাড়ির কাজ করছেন ঠিকাদার আকবর ও তার দুই ভাই-বোন। সম্প্রতি নিচ তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।
রুদ্রপুর রোডের বড়ই বাগান এলাকার দক্ষিণে ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি করছেন মোহাম্মদ আলী। প্রবেশের রাস্তা ও বাড়তি জায়গা না থাকায় বনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী।
পশ্চিম নয়নপুরে এক সেনা সদস্যের ভাইসহ তিনজন মিলে করেছেন নয়টি টিনশেড ঘর। বনভূমি ব্যতীত রাস্তা না থাকলেও কথিত ডিমারকেশন দিয়েছে বিট অফিস।
রুদ্রপুর দক্ষিণপাড়া এলাকায় রিসোর্টের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের কাজ সম্প্রতি সম্পন্ন করেছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সোহরাব হোসেন। রিসোর্টটির গেটের সামনের অংশ বনভূমি।
এতে বনভূমি ব্যতীত প্রবেশের কোন রাস্তা নেই। ডিমারকেশন ছাড়া কাজ চললেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা রেজাউল করিম আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি বনের অংশ দিয়ে গাড়ি চলাচলে নিষেধ করেছি। না মানলে মামলা করব।
একাধিক বাড়ির মালিক বলেন, যৌথ ডিমারকেশনে টাকা ও সময় বেশি লাগে। ফাউন্ডেশন বাড়ির ক্ষেত্রে বিট অফিসকে এক-দুই লাখ টাকা দিলে অনুমতি মেলে।
সাবেক ডিএফও জহির উদ্দিন আকনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার কয়েকজন বলেন, হাঁটাচলার রাস্তা থাকলেও তারা ডিমারকেশন পাননি। কিন্তু বরিশালের লোকজনকে বনের ভেতরেও গোঁজামিল দিয়ে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
একজন বন কর্মকর্তা বলেন, বনভূমির ক্ষতি করে বাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। এসবের প্রভাবে ধীরে ধীরে বন উজাড় ও দখল হচ্ছে।