গাজীপুরে ‘প্রশাসনের যোগসাজশে’ ১০ কোটি টাকার খাস জমি আত্মসাৎ

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে ১০ কোটি টাকার খাস জমি আত্মসাৎ করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে।

নগরীর ২২ নং ওয়ার্ডের শিল্প কারখানা অধ্যুষিত জাঙ্গালিয়াপাড়ার বাংলাবাজার এলাকায় অবাধে চলছে এ দখলযজ্ঞ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলাবাজার রোডের একটু উত্তরে স্থানীয় আবদুল আজিজের একাধিক বাড়ি ও কিন্ডারগার্টেন স্কুল। পাশে তার দানকৃত জমিতে কমিউনিটি ক্লিনিক ও ওয়াকফকৃত জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে মসজিদ।

ভোগদখলীয় অংশে কিন্ডারগার্টেন

স্কুল মাঠের দক্ষিণ পাশের বাড়িটি ভাড়া দেওয়া। সেখানে সাড়ে ছয় লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে কমিউনিটিভিত্তিক ওয়াশ রুম নির্মাণ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র।

বাংলাবাজার রোড সংলগ্ন অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ জমির অর্ধেকেরও বেশি অংশে একটি পুকুর ছিল। গত বছর বালু ফেলে ভরাট করে তাতে হাজী আজিজ সুপার মার্কেট নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়।

তিন তলা ফাউন্ডেশন মার্কেটটির নিচ তলার কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। শতাধিক দোকান ভাড়া দেওয়ার লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের জামানত।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্থাপনাগুলো বাহাদুরপুর মৌজার ১ নং খতিয়ানভুক্ত এসএ ৩০৪ নং দাগে গড়ে উঠেছে। যার বিভক্ত আরএস দাগ নং ৬৫৩।

প্রভাবশালী আবদুল আজিজের একমাত্র ছেলে জাহাঙ্গীর আলম শহরের অন্যতম গ্লাস ব্যবসায়ী। দাগটি পার্ট হওয়ায় বাবার নামে ডিমারকেশন করেছেন তিনি।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এসএ শাখার ১৮১/২০১৮ নং সীমানা নির্ধারণ মামলা ঘেঁটে দেখা যায়, বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনার ৭৭ শতাংশ জমি খাস হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর খালি ৭০ শতাংশ জমি দেখানো হয়েছে জোত হিসেবে।

অর্থাৎ ৭৭ শতাংশ জমি অনেক আগে থেকেই তাদের ভোগদখলে। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশে মার্কেট নির্মাণের ফলে সরকারি জমির অবস্থান এখন কাগজে-কলমে।

সদর উপজেলা ভূমি অফিসের ১০৭/২০১৮ নং সীমানা নির্ধারণ মামলা অনুযায়ী, সরেজমিনে মাপজোখ করে জমির অবস্থানগত স্কেচ ম্যাপ তৈরি করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন সাবেক এসিল্যান্ড তানভীর-আল-নাসীফ, কানুনগো চৌধুরী গোলাম মর্তুজা, সার্ভেয়ার আবুল কালাম ও সালনার সাবেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল আলীম।

পরে সাবেক আরডিসি (বর্তমানে জেএম শাখা) জান্নাতুল ফেরদৌস ও সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সঞ্জীব কুমার দেবনাথের স্বাক্ষরের পর সাবেক জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর অনুমোদন দেন। ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়।

একাধিক এলাকাবাসী জানান, ওই মহল্লায় বিঘাপ্রতি জমির বর্তমান বাজারমূল্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। সে হিসাবে দখলীয় জমির মূল্য দাঁড়ায় ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

খাস জমিতে নির্মিত বাড়িটি ভাড়া দেওয়া

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম আলোকিত নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসন নিয়ম মেনে ডিমারকেশন দিয়েছে। আগের ভোগদখলীয় অংশ সরকারের।

তিনি আরও বলেন, আমি স্কুলের নামে জমি লিজের জন্য আবেদন করেছি। ডিসি অফিস হয়ে ফাইল ভূমি মন্ত্রণালয়ে আছে।

ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, তঞ্চকতাপূর্ণ ডিমারকেশনটিতে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে। সন্দেহের অগ্রভাগে থাকা সার্ভেয়ার আবুল কালাম বর্তমানে এলএ শাখায় কর্মরত আছেন।

একাধিক ভূমি কর্মকর্তা বলেন, পার্ট দাগে ডিমারকেশনের সময় সরকারের স্বার্থে রাস্তা সংলগ্ন অংশ অগ্রাধিকার পায়। দখলীয় অংশকে খাস দেখিয়ে খালি অংশ দখলদারের হাতে তুলে দেওয়া গুরুতর অপরাধ।

তারা আরও বলেন, খাস জমি ওয়াকফ বা দান করার এখতিয়ার কোন ব্যক্তির নেই। আগের ভোগদখলীয় অংশই জোত হিসেবে পরিগণিত হবে।

সালনা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল আলীম বর্তমানে মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত।

তিনি আলোকিত নিউজকে বলেন, সার্ভেয়ার আবুল কালাম জমি দেখে স্কেচ ম্যাপ করেছেন। আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি।

পরে সার্ভেয়ার আবুল কালামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে অনিয়ম হয়নি বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন।

এক পর্যায়ে কয়েক দিনের সময় চেয়ে আলোকিত নিউজকে বলেন, কাজে ভুল হতে পারে। পিটিশন দিয়ে ডিমারকেশন বাতিল করতে হবে।

এরপর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও তিনি কোন তৎপরতা দেখাননি। উল্টো মার্কেটের নির্মাণ কাজের গতি আরও বেড়েছে।

আরও খবর