গাজীপুরে অধিগ্রহণ বিলে ‘নয়ন চক্রের’ বাণিজ্য ধামাচাপা!
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুর জেলা প্রশাসকের এলএ শাখায় সিন্ডিকেট দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে।
বিষয়টির ওপর গত বছরের ১৪ অক্টোবর আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এতে ওঠে আসে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জমির অধিগ্রহণ বিল প্রদানে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের চিত্র।
পরে জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব ও এলএ) মশিউর রহমানকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এরপর তদন্ত বা জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তার কোন খবর পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কাপাসিয়ার সাথে মনোহরদীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রাণীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য জনসাধারণের জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
জরিপের সময় নয়ন নামের দুজন স্থানীয়দের সাথে সখ্যতা গড়ে বিল উত্তোলনের চুক্তি করেন। তাদের একজন জেলা প্রশাসনের কর্মচারী ও অপরজন অধিগ্রহণের বিল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত।
তারা ক্ষতিগ্রস্তদের বোঝাতে সক্ষম হন যে ভ্যাটসহ খরচ পড়বে ৩০ পার্সেন্ট। সে মতে ৩০০ টাকার খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
এরপর নয়ন গং স্বাক্ষর নিয়ে বিলের আবেদন জমা দেয়। এমনকি তারা আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শিববাড়ি শাখায় অ্যাকাউন্ট করিয়ে চেকবইও নিজেদের কাছে রেখে দেন।
রোহিনী মন্ডলের ছেলে ব্যবসায়ী সুধাংশু চন্দ্র মন্ডল অভিযোগ করেন, তাদের জমি ও অবকাঠামো বাবদ এক কোটি ৪১ লাখ টাকার মধ্যে এক কোটি ২৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ থেকে নয়ন ৫৬ লাখ টাকা রেখে বাকি ৬৮ লাখ টাকা কাপাসিয়ার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন।
এর আগে আদালতে স্ট্যাম্প দিয়ে একটি মামলা করে চুক্তির ২৬ লাখ টাকার স্থলে ৫৬ লাখ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। বিলের বাকি ১৭ লাখ টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না।
সুধাংশু বলেন, আলোকিত নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নয়ন গং তাকে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে চুপ থাকতে বলে। কিন্তু কোন টাকা দেয়নি।
রাণীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম পাশে দিলীপ চৌহানদের বাড়ি। তাদের বাড়ি, জমি ও গাছপালা বাবদ বিল এক কোটি টাকার বেশি।
আলোকিত নিউজের সাথে কথা বলার সময় তিনি সংকোচ বোধ করছিলেন। বেশি কিছু না বলতে বারণ করেন তার এক ভাই।
দিলীপ জানান, নয়নদের সাথে তাদের ২৫ পার্সেন্টের চুক্তি ছিল। এ ছাড়া নয়ন কিছু খালি জায়গা ভাড়া নিয়ে ঘর তুলে বাড়তি বিল করিয়েছেন।
সে হিসাবে নয়ন গং দিলীপ পরিবারের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছে।
বাড়ৈগাঁও গ্রামের সাহাজ উদ্দিনের স্বজনরা জানান, জমি ও পাকা স্থাপনা বাবদ প্রায় ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিলে নয়নের সাথে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি ছিল। পরে কম দেওয়া হয়েছে।
নয়ন গং এভাবে তিনটি স্পটেই প্রায় এক কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। এ ধরনের ভুক্তভোগী আরও রয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, গত প্রায় এক বছরেও কোন কর্মকর্তা এলাকায় তদন্তে যাননি। নয়নদের সাথে স্থানীয় দু-চারজন লোক জড়িত। কেউ কেউ ভয়ে মুখ খুলেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটির বিল প্রদানের দায়িত্বে আছেন সার্ভেয়ার কামরুল ইসলাম। এলএ শাখায় বিল উত্তোলনে ১৫ পার্সেন্ট ঘুষ দিতে হয়-এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মশিউর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে পৌনে দুই কোটি টাকার অধিগ্রহণ বিলে ঘুষ ৭১ লাখ!