গাজীপুরের মনিপুর বিটে বনভূমিতে মার্কেট ও বাড়ির ছড়াছড়ি

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের মনিপুর বিটে নানা কৌশলে বনভূমি দখল বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা বন বিভাগের অধীন রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের এই বিটটিতে দীর্ঘদিন ধরে এসব চললেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।

সুযোগ পেয়ে কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী মূল্যবান বনভূমি বেহাত করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

ইতিপূর্বে আলোকিত নিউজ ডটকমে কয়েকটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তৎপর হয় বন বিভাগ। পরে তদন্ত হলেও বন্ধ হয়নি বাণিজ্য।

সরেজমিনে জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন বেগমপুর হোতাপাড়া এলাকার সিএস ৫৯৮ নং দাগের জমি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত। এ নিয়ে বন বিভাগের পক্ষে আদালতে আরএস রেকর্ড সংশোধনীর মামলাও বিচারাধীন।

সেখানে গত বছর সাড়ে তিন কাঠা জমিতে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে ভবন নির্মাণ শুরু করেন বেলায়েত হোসেন ওরফে বেলায়েত ডাক্তার। ভবনটির তৃতীয় তলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিচ তলা টাইলস ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছেন।

বিষয়টির ওপর আলোকিত নিউজে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও সাবেক বিট কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কোন ব্যবস্থা নেননি।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের হোতাপাড়ায় বনভূমি দখলে বেলায়েত ডাক্তারের দাপট!

এই ভবনের দক্ষিণ পাশে প্রায় তিন কাঠা জমিতে আরেকটি মার্কেট নির্মাণ করছেন বেলায়েত ডাক্তার। মার্কেটের তৃতীয় তলার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে নিচ তলা টাইলস ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

নির্মাণাধীন মনির মাস্টারের বাড়ি

মার্কেটটির পশ্চিম পাশে তিন কাঠা জমিতে বাড়ি নির্মাণ করছেন স্কুলশিক্ষক মনির হোসেন। এরই মধ্যে তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে।

এ ব্যাপারে বেলায়েত ডাক্তার ও মনির হোসেন আলোকিত নিউজকে বলেছেন, ওই জমির আরএস রেকর্ড তাদের নামে। তাই তারা কাজ করছেন।

এলাকাবাসী জানান, তাদের কারও যৌথ ডিমারকেশন নেই। বিট অফিস ম্যানেজ না করে ভবন তো দূরের কথা, ছোট কিছুও করা যায় না।

একজন বন কর্মকর্তা বলেন, পার্ট দাগে ডিমারকেশন ছাড়া স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। আর দাগটি নিয়ে যেহেতু মামলা বিচারাধীন, সেহেতু রায় না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

একই এলাকায় ইএসবিএল গার্মেন্টসের দক্ষিণ পাশে তিন তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন রুকন উদ্দিন।

গার্মেন্টসের উত্তর পাশে তিন মাস আগে চারটি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন তার ভাই সিরাজ উদ্দিন। মাস খানেক আগে আরও তিনটি দোকান করা হয়েছে।

সিরাজের মার্কেট

তার টিনশেড মার্কেটের পশ্চিম পাশে পুকুর আংশিক ভরাট করে চারটি দোকান নির্মাণ করছেন আরেক ভাই সুরুজ মিয়া।

করোনাকালে রাজশাহী মার্কেটের উত্তর পাশে নেত্রকোনার হাবিব সাড়ে চার কাঠা বনভূমি কিনে তিন রুমের বাড়ি করেছেন। মিলন চার কাঠা জমিতে আগের তিনটিসহ করেছেন ছয় রুমের বাড়ি।

কুষ্টিয়া মার্কেটের দক্ষিণ পাশে আনোয়ারের কাছ থেকে দুই কাঠা বনভূমি কিনে বাড়ি করেছেন শাহজালাল।

নয়াপাড়া এলাকার সেমিকন কারখানার পূর্ব পাশে গেজেটভুক্ত প্রায় ১০ শতাংশ বনভূমি দখল করে ব্যবসা করছেন স্থানীয় আবু তালেব। করোনাকালে টিনশেডের দোকান পাকা করা হয়েছে।

আবু তালেবের দোকান ও ইট-বালুর ব্যবসা

এলাকাবাসী জানান, শতাংশপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা হিসাবে আবু তালেবের দখলীয় জমির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। তার বিরুদ্ধে বন মামলাও রয়েছে।

এ ব্যাপারে আবু তালেব উত্তেজিত হয়ে আলোকিত নিউজকে বলেন, তোমরা কিসের সাংবাদিক? যা পারো গিয়ে করো।

নয়াপাড়া ফকির মার্কেটের দক্ষিণ পাশে প্রায় ১৫ কাঠা বনভূমি দখল করে তিন রুমের বাড়ি করেছেন রাবেয়া ও তার স্বামী নূর ইসলাম।

এভাবে মনিপুর খাসপাড়া এলাকার চায়ের দোকানদার সাইফুল বনভূমিতে চার রুমের পাকা বাড়ি করেছেন।

সড়কঘাটা রোডের পাশে একটি বড় দোকান করে ফার্নিচার ব্যবসায়ী শরিফুলের কাছে ভাড়া দিয়েছেন আলাউদ্দিন। পাশে তার আরও চারটি দোকান ভাড়া দেওয়া রয়েছে।

আলাউদ্দিনের মার্কেট

এ ছাড়া মফিজুল ইসলামের ছেলে হানিফ দুটি দোকান করে ভাড়া দিয়েছেন। নির্মাণ কাজগুলো প্রকাশ্যে চললেও বিট অফিস বাধা দেয়নি।

স্থাপনাগুলোর মধ্যে বেশির ভাগের কাজ সাবেক বিট কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদের আমলে শুরু হয়। কয়েকটির কাজ এখনো চলছে।

এ ব্যাপারে বর্তমান বিট কর্মকর্তা আবদুল আউয়ালের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের মনিপুর বিটে দখল বাণিজ্য জমজমাট

আরও খবর