গাজীপুরের সাফারি পার্ক রোডের অধিগ্রহণ বিলে রফিকের কারসাজি
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সংযোগ সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালে।
জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের বিল প্রদানের জন্য তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখা।
তখন সংঘবদ্ধ চক্র মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে নানা তৎপরতায় লিপ্ত হয়।
সরকারের টাকা লুটপাটের এমন কিছু চিত্র নিয়ে আলোকিত নিউজের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব আজ।
রফিক কাহিনি : সাফারি পার্কের মেইন গেটের পূর্ব দিকে বাঘের বাজার রোডে রফিকুল ইসলামের পৈতৃক বাড়ি। তিনি পার্কের অ্যানিমেল কিপার ছিলেন। গত নভেম্বরে চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী বিভাগে বদলি হয়েছেন।
রফিকের বাবা শুক্কুর আলী ও মা আম্বিয়া খাতুন। রাস্তার দক্ষিণ পাশে রাথুরা মৌজার এসএ ৩২২২ নং দাগে তাদের আধা পাকা বাড়ি। আর বরাবর রাস্তার উত্তর পাশে ৩২২০ নং দাগে ইমাম উদ্দিনের বাড়ি।
রাস্তার দুই পাশে ১৩ ফুট করে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। উভয় বাড়ির অধিগ্রহণকৃত স্থাপনা, জমির পরিমাণ, মৌজা ও শ্রেণি একই।
কিন্তু শুক্কুর পরিবারের নামে বিল হয়েছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। আর ইমাম উদ্দিন ও তার স্ত্রী আনোয়ারার নামে বিল হয়েছে ১৯ লাখ টাকা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাড়ি দুটির সামনের অংশের ছয়টি করে দোকান অধিগ্রহণে পড়েছে। রফিকের বাবার বাড়ির বিদ্যুতের মিটার বসানো হয়েছে দোকান লাগোয়া পশ্চিম ঘরের উত্তরে। অধিগ্রহণের সময় পরিমাণ একটু বাড়িয়ে মিটার ও ঘরের পিলার লাল দাগের ভেতরে ফেলা হয়েছে।
এতে দোকানের অংশের সাথে যোগ হয়েছে বাড়ির ক্ষতি। ইমাম উদ্দিন দম্পতির চেয়ে বিল বেশি হয়েছে ৪০ লাখ টাকা।
এলাকাবাসী জানান, এ ধরনের ক্ষতিপূরণ বিল আরও রয়েছে। বন বিভাগের কর্মচারী রফিক কৌশলে বাণিজ্য করছেন। তাকে হাত করলে বিল কয়েক গুন বাড়ে-এমন প্রচার বেশ।
পার্কের মোড় থেকে অল্প দক্ষিণে আবদুল কাদিরের বাড়ি। অধিগ্রহণের খবরে তিনি রাস্তার পাশে কয়েকটি দোকান ঘর করেন।
সার্ভের সময় স্থাপনার পেছনে গোডাউন তৈরি করা হয়। পরে জমি ও পুরো স্থাপনার বিল হয় ৫২ লাখ টাকা।
কাদিরের ছেলে নাজমুল হক ওই রফিকের খালাতো বোনের জামাই। তারা ইতিপূর্বে বিল উঠিয়ে তড়িঘড়ি করে স্থাপনা ভেঙে বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রফিকের মাধ্যমে যোগসাজশ করেই অস্বাভাবিক বিল তৈরি, উত্তোলন ও ইট-টিন সরানো হয়েছে। অথচ নিলাম ব্যতীত স্থাপনা ভাঙা বা স্থানান্তরের নিয়ম নেই।
এ ব্যাপারে আবদুল কাদিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ছেলে নাজমুলকে ডেকে কথা বলতে বলেন।
নাজমুল হক আলোকিত নিউজকে বলেন, তাদের জমির বিল নয় লাখ ৫২ হাজার টাকা। বাকিটা স্থাপনার। দোকান চৌচালা থাকায় বিল বেশি হয়েছে।
বিল উত্তোলনে এলএ শাখায় কত দিতে হয়েছে-প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে সত্য কথা বলার কোন সুযোগ নেই। আমি কিছু বলতে রাজি না।
অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম আলোকিত নিউজের কাছে দাবি করেন, তার মধ্যস্থতায় কোন কিছু হয়নি। এলাকার কয়েকজন শত্রুতা করে এসব বলছেন।
এদিকে সার্ভের সময় ভারপ্রাপ্ত কানুনগোর দায়িত্বে ছিলেন সার্ভেয়ার ওমর ফারুক। তিনি কানুনগো পদে পদোন্নতি পেয়ে এখন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত।
বর্তমানে প্রকল্পের বিল প্রদানের দায়িত্বে আছেন সার্ভেয়ার আবুল কালাম আজাদ। তার সাথে যোগাযোগ করেও তথ্যগত সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।