গাজীপুরে কোর জোনে কারখানা বাড়াচ্ছে হেলথকেয়ার : ঝুঁকিতে বনভূমি
আলোকিত প্রতিবেদক : চারপাশে সংরক্ষিত বনভূমি। মাঝের জোত জমিতে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
গাজীপুর মহানগরীর রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তার পশ্চিমে বাংলাবাজার রোডে গজারিয়াপাড়া এলাকায় ওষুধ তৈরির কারখানাটি অবস্থিত।
কারখানায় প্রবেশের নিজস্ব বা সরকারি রেকর্ডের কোন রাস্তা নেই। বনভূমি দখল করে দীর্ঘ পথ নির্মাণ করা হয়েছে।
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে চলে নতুন আটটি ভবনের নির্মাণ কাজ।
কারখানা ঘেঁষে বনভূমি থাকলেও ডিমারকেশন করা হয়নি। বন বিভাগও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
বিষয়টির ওপর ২০১৭ সালের ২৭ মে আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে চলে ব্যাপক তোলপাড়।
পরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করে বন বিভাগ। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নবনির্মিত বহুতল ভবনগুলোতে যন্ত্রপাতি স্থাপন ও উৎপাদন শুরু হয়েছে। দুটি ভবনে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর।
পশ্চিম পাশে স্টিলের ছয় তলা আবাসিক ভবনের কাজ চলছে। ভবনগুলোর এক তলা থেকে অপর তলার উচ্চতা সাধারণ ভবনের চেয়ে বেশি।
সরকার ঘোষিত বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এলাকা থেকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত কোর জোন। জাতীয় উদ্যান থেকে হেলথকেয়ারের দূরত্ব পৌনে এক কিলোমিটার।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ অনুযায়ী, এই কোর জোনে শিল্প কারখানা স্থাপন বা পরিচালনা নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
জবর দখলের তালিকায় থাকা হেলথকেয়ার ২০১২ সালের আগে চালু হয়েছে। কিন্তু ব্যাপক সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে।
আইনে কোর জোনে কারখানা সম্প্রসারণের অনুমতি সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা নেই। মালিক আলাউদ্দিন আহমেদ দাপট দেখিয়ে বন ও পরিবেশের ক্ষতিসাধন করছেন।
এরই মধ্যে ভবন নির্মাণের ফলে কিছু গজারি ও আকাশমনি গাছ মারা গেছে। উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে নির্গত গরম পানির প্রভাবে হ্রাস পাচ্ছে মাটির উর্বরাশক্তি।
এদিকে হেলথকেয়ারের ভবনগুলো নির্মাণে জেলা প্রশাসনের ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র, পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র ও প্ল্যান অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
রাজউকের গাজীপুর জোনাল অফিস জানিয়েছে, ওই এলাকা তাদের আওতাধীন নয়। সিটি করপোরেশনের সালনা আঞ্চলিক কার্যালয় বলছে, হেলথকেয়ার তাদের কাছ থেকে প্ল্যান অনুমোদন নেয়নি।
সিটি করপোরেশনের পরামর্শে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে খোঁজ নেয় আলোকিত নিউজ। সেখানেও তথ্য মেলেনি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্ল্যান অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাস্তা অবশ্যই থাকতে হবে। বনভূমি দখল করে অবৈধ রাস্তাকে প্রকল্পের নিজস্ব রাস্তা হিসেবে দেখানোর সুযোগ নেই।
তারা আরও বলেন, নিয়মের মধ্যে হেলকেয়ারের প্ল্যান অনুমোদন হওয়ার কথা নয়। হয়তো অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, নয়তো অনুমোদন নেই।
গত ৪ নভেম্বর পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে কারখানা পরিচালনার দায়ে মালিককে ১০ লাখ এক হাজার টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
একজন বন কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধ এলাকায় কারখানা সম্প্রসারণ ও ভবন নির্মাণে অনিয়মের প্রসঙ্গ আড়ালে রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তৎপর হওয়া জরুরি।
এ ব্যাপারে হেলথকেয়ারের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের ই-মেইলে গত ২১ ও ২২ ডিসেম্বর যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবদুস সালাম সরকারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এলাকায় হেলথকেয়ার বেপরোয়া