কাপাসিয়ায় দৌড়ানি দিল রাজহাঁস, মামলায় সাংবাদিকসহ আসামি ৪
আলোকিত প্রতিবেদক : মানুষ দেখে তেড়ে গেল রাজহাঁস। দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে হাতে আঘাত পেলেন একজন।
আর এই ঘটনাটি নিয়ে মামলা করা হল আদালতে। আসামি হলেন এক সাংবাদিকসহ চারজন।
ঘটনাস্থল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের মৈশন মিয়াবাড়ি। মামলার কথা শুনে এলাকাবাসীও অবাক।
সরেজমিনে জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত আওরঙ্গজেব চৌধুরী ওরফে মহন মিয়ার ছেলে শাহ আলম চৌধুরী ওরফে খোকন ও রোকন নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। এসব নিয়ে তাদের সাথে সাংবাদিক মাসুদ পারভেজ চৌধুরীর মতবিরোধ চলে আসছে।
গত ২৬ ডিসেম্বর খোকনের সাবেক স্ত্রী তানজিরী আলম সাথী শ্লীলতাহানি ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে খোকন-রোকনসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ২২ (১২) ২০।
এতে বলা হয়, খোকন বাদীকে একবার তালাক দিয়ে পুনরায় বিয়ে করে আবারও তালাক দিয়েছেন। খোকনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে আনতে গেলে তার শ্লীলতাহানি ও শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
এই মামলায় সাংবাদিক মাসুদের হাত রয়েছে বলে খোকন ও রোকন সন্দেহ করেন। এরপর খোকন দ্রুত দক্ষিণ আফ্রিকা চলে যান।
সেখান থেকে মাসুদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে শুরু হয় ব্যাপক অপপ্রচার। দৈনিক দেশ নামে একটি ভুয়া পেজও খোলা হয়।
আরও পড়ুন : কাপাসিয়ায় ফেক আইডি খুলে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার
গত ১৩ জানুয়ারি দুপুরে খোকনদের বাড়ির রাজহাঁসের তাড়া খেয়ে পড়ে ডান হাতে আঘাত পান তার মামাতো ভাই ফারদিন ইসলাম (১৯)। এ ঘটনায় ২১ জানুয়ারি গাজীপুর আদালতে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করা হয়।
আদালতের নির্দেশে মামলাটি ইতিমধ্যে কাপাসিয়া থানায় রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। মামলা নম্বর ১১ (১) ২১। আসামিরা হলেন মাসুদ পারভেজ চৌধুরী, খোকনের সাবেক স্ত্রী রায়েদ ইউনিয়নের হাইলজোর গ্রামের সাথী, সাথীর ভাই তৌহিদুর রহমান রাজীব ও বাবা রফিকুল আলম মোল্লা।
মামলার বাদী ঢাকার লালবাগের জনৈক আবদুর রাজ্জাক। বর্ণিত ভিকটিম ফারদিনের সাথে তার সম্পর্ক কী, তা আরজিতে উল্লেখ নেই।
মামলায় বলা হয়েছে, ফারদিনকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাদী শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করলে পথে অবস্থা আরও খারাপ হয়।
পরে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক পঙ্গু হাসপাতালে যেতে বলেন। পথে অবস্থা আরও খারাপ হলে রাজবাড়ি রোডের বেসরকারি সিটি হাসপাতালে নিয়ে তার অপারেশন করা হয়।
মামলার সাথে সংযুক্ত কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, শ্রীপুর ও তাজউদ্দীন মেডিকেল থেকে দেওয়া রোগীর টিকিট দুটিতে ‘পুলিশ কেস’ সংবলিত কোন সিল নেই। মারামারির ঘটনা হলে তা উল্লেখ থাকে।
স্থানীয়রা বলছেন, মারামারি হলে ভিকটিমকে প্রথমে কাছের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু চার কিলোমিটারের বদলে ১৫ কিলোমিটার দূরের শ্রীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া উদ্দেশ্যমূলক।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বাবলু, কৃষক লীগ নেতা হাফিজুল হক চৌধুরী আইয়ুব, রাশিদা চৌধুরী, আজিজুর রহমান লিয়ন, সাফিয়া চৌধুরী, রহিমা চৌধুরী মিতু, নূরুল করিম টিটু, স্কুলছাত্র অপূর্ব ও নির্মাণ শ্রমিক মাহমুদুল হাসান আলোকিত নিউজকে জানান, ওই দিন মারামারির কোন ঘটনা ঘটেনি। ফারদিন রাজহাঁসের দৌড়ানিতে পড়ে আঘাত পেয়েছেন। সুষ্ঠু তদন্ত হলেই মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
সাংবাদিক মাসুদ আলোকিত নিউজকে বলেন, ঘটনার দিন আমি উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির অনুষ্ঠানে ছিলাম। আমার ক্ষতির উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে মামলা ও ফেসবুকে নোংরা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অপপ্রচারের বিষয়ে গত ১৭ জানুয়ারি থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেছি। ডাইরি নম্বর ৭৭০। আমরা বাদীকেও চিনি না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত খোকন বিদেশে থাকায় ও রোকন দেশে পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই পলাশ বাউন আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি মেডিকেলের সার্টিফিকেট পাচ্ছি না। তদন্ত অব্যাহত আছে।
মামলার সত্যতা প্রসঙ্গে বলেন, ঐখানে হাত ভাঙছে, একটা ঘটনা ঘটছে। তদন্তের স্বার্থে বিষয়টা এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না।
আরও পড়ুন : কাপাসিয়ায় সাংবাদিক মাসুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ